অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলটি ‘মুসা’র। কিন্তু তাতে ‘মেসেজ’ আসত-যেত এমন একটি ‘অ্যাপ’ বা ‘অ্যাপ্লিকেশন’-এ যা আইএস জঙ্গিরাও ব্যবহার করে। ঢাকার গুলশনে হত্যাকাণ্ডের পরে জঙ্গিরা তাদের হত্যালীলার ছবি ‘আপলোড’ করেছিল যে ‘অ্যাপ’-এর সাহায্যে, সেই ‘সিরিয়াসলি সিকিওর মেসেজিং সফ্টওয়্যার’ রয়েছে ‘মুসা’র মোবাইলে, এমনই দাবি গোয়েন্দাদের। লাভপুরের মহম্মদ মুসাউদ্দিন ওরফে মুসা কেন সেই ‘অ্যাপ’ ব্যবহার করে জানতে গিয়ে অবাক গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, মুসার মোবাইলে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক তদন্তকারী অফিসারের নম্বর রয়েছে। নম্বর জোগাড় করে সে ওই অফিসারদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ফোন করত। পরিচয় দিত কখনও বাড়িভাড়ার দালাল, কখনও নির্মাণ শ্রমিক সরবরাহকারী হিসেবে। এক গোয়েন্দা-কর্তার দাবি, জেরায় মুসা জানায়, বিভিন্ন অফিসারকে নানা ধরনের ‘প্রয়োজনীয়’ খবরও জোগাড় করে দিত সে। ফলে বাড়াত ঘনিষ্ঠতা। ওই কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের অনুমান, ঘনিষ্ঠ অফিসারদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে পাচার করত মুসা। তাই এ রকম ‘অ্যাপ’-এর দরকার ছিল।’’
যে কেউ কি চাইলেই সরকারি গোয়েন্দাদের ঘনিষ্ঠ হতে পারে? এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, ‘‘সমাজের বিভিন্ন স্তরে ‘সোর্স’ রাখতে হয়। কোনও মামলায় কোনও অফিসারকে ঠিকঠাক তথ্য দিলে সেই ‘সোর্স’-এর উপরে নির্ভরতা বাড়ে। ঘনিষ্ঠতার জায়গা সেটাই।’’
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মঙ্গলবার কলকাতায় জেরার সময় এক তদন্তকারীর পরিচয় জেনে মুসা বলে, ‘‘ও আপনিই সেই অফিসার! শুনেছি, আপনার নাম।’’ মুদির দোকানি, পাশ কোর্স পাশ না করা যুবক কী ভাবে জঙ্গি কাজে নজরদারিতে ব্যস্ত ওই অফিসারের নাম জানল? গোয়েন্দাদের দাবি, মুসা স্বীকার করেছে, শুধু জঙ্গি সংগঠন নয়, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গেও তার যোগ রয়েছে। সেই সুবাদেই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কোন অফিসারের উপরে নজর রাখতে হবে, সে ব্যাপারে তার কাছে ‘মেসেজ’ আসত। সেই মতো সেই অফিসারদের ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার চেষ্টা করত সে।
মুসা জানায়, নজরদারি এড়াতে সে ব্যবহার করত সুইৎজারল্যান্ডে তৈরি একটি বিশেষ ‘অ্যাপ’। সে ‘অ্যাপ’ এমনই, যাতে নম্বর যাচাই করতে হয় না। আড়ালে থেকে তথ্য দেওয়া-নেওয়া চালানো যায়। ‘অ্যাপ’টি নির্দিষ্ট ‘কিউআর কোড’ এবং আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট অথেন্টিকেশান) দিয়ে সুরক্ষিত থাকায় নির্দিষ্ট লোক ছাড়া ব্যবহার করা অসম্ভব। আইনি প্রয়োজন হলেও এই ‘অ্যাপ’-এ দেওয়া-নেওয়া হওয়া তথ্য পাওয়া অসম্ভব।
মুসাকে ১৪ দিন সিআইডি হেফাজতে পাঠিয়েছেন হাওড়ার মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক। সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘এই সময়ের মধ্যে জানার চেষ্টা করব, ওই অ্যাপ ব্যবহার করে মুসা কী কী ধরনের তথ্য দেওয়া-নেওয়া করেছে।’’ মুসার তামিলনাড়ুর বাড়ি থেকে ছ’টি সিম-কার্ড এবং একটি ল্যাপ-টপ উদ্ধার করা হয়েছে। মুসার স্ত্রী, দুই সন্তান এবং আরও দু’জনকে আটক করে জেরা করা হচ্ছে।