উচ্চ আদালত যতটা সরব হল, ডেঙ্গি নিয়ে প্রায় ততটাই নীরব থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দীর্ঘদিন ধরে ডেঙ্গি-জ্বরের দাপট চলতে থাকায় এ বার গ্রামাঞ্চলে মোবাইল বা ভ্রাম্যমাণ ভ্যান ইউনিট পাঠিয়ে ওই রোগে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসা করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে দায়ের করা এক গুচ্ছ জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে শুক্রবার এই অন্তর্বর্তী রায় দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট পাঠাতে হবে। মামলার চলবে।
রাজ্যের অনেক এলাকার মতো তিন মাস ধরে ঘরে ঘরে জ্বর চলছে দেগঙ্গায়। সেই এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে হাড়োয়ার সার্কাস ময়দানে এ দিন সভা করলেও ডেঙ্গি-জ্বর নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। দেগঙ্গায় ডেঙ্গি-জ্বরে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। বিরোধীদের অভিযোগ, ডেঙ্গি-জ্বরের মোকাবিলায় রাজ্য সরকার ব্যর্থ। দেগঙ্গা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ডেঙ্গির তথ্য গোপন করা হচ্ছে।
হাড়োয়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রী জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ে মুখ না-খুললেও স্বাস্থ্য পরিষেবায় রাজ্য কতটা উন্নতি করেছে, সেই ফিরিস্তি দিতে অনেকটা সময় খরচ করেছেন। সরকারি হাসপাতালে যে বিনা খরচে স্বাস্থ্য পরিষেবা মিলছে, সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে এখন টাকা লাগে না। হার্ট, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টও হয় বিনা খরচে। শয্যার ভাড়াও লাগে না। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান, পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের আমরা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় এনে চিকিৎসা বিমা করিয়েছি।’’
ডেঙ্গি-জ্বরকে পাশ কাটিয়ে মমতা যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে পঞ্চমুখ হলেন, তারও সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিরোধী শিবির। তাদের অভিমত, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী আসলে জ্বরের পরিস্থিতিকে লঘু করে দেখা চাইছেন।
ডেঙ্গি পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকারের গাফিলতির অভিযোগ তুলে আটটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দেবর্ষি চক্রবর্তী গ্রামাঞ্চলে মোবাইল ভ্যান ইউনিট পাঠিয়ে ডেঙ্গি-আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসা করানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। এ দিন কার্যত সেই আবেদনেই সিলমোহর দিল উচ্চ আদালত। হাইকোর্টের এ দিনের নির্দেশে আরও এক বার সরকারের মুখ পুড়ল বলেই মনে করছেন বিরোধীরা।
ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলাগুলি খারিজ করার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্জি জানানো হয়েছিল। দেবর্ষিবাবুর আইনজীবী শুভাশিস চক্রবর্তী জানান, সংবাদপত্রে ডেঙ্গির খবরের ভিত্তিতে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার ফলে এই মামলার আইনগত ভিত্তি নেই বলেও জানিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সংবাদপত্রে নির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই মামলা। ফলে রাজ্যের যুক্তি টেকে না।
শুভাশিসবাবু আরও জানান, ২০১৩ সালে ডেঙ্গি নিয়ে কয়েক দফা নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তার ভিত্তিতে রাজ্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানিয়ে শীতকালীন ছুটি শেষের এক সপ্তাহ পরে হলফনামা দাখিল করতে বলা হয়েছে সরকারকে।
রাজ্যের আবেদন খারিজের পরে কী বলছেন প্রশাসনিক কর্তারা?
‘‘মামলা তো এখনও চলবে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করব না,’’ বলেন এক স্বাস্থ্যকর্তা। ডেঙ্গি-জ্বরে মৃতদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়ার জন্যও আবেদনকারীদের তরফে আর্জি জানানো হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে।
হাইকোর্টের অর্ন্তবর্তী নির্দেশের প্রেক্ষিতে একটি জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে প্রসেনজিৎ বসু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উচিত, মামলাগুলিকে খারিজ করানোর চেষ্টার পিছনে সময় নষ্ট না-করে ডেঙ্গি-আক্রান্ত মানুষকে কী ভাবে বাঁচানো যায়, জরুরি ভিত্তিতে তার ব্যবস্থা করা।’’