—নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সফরের আগেই প্রকাশ্যে এল হুগলিতে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বুধবার নড্ডা আসার আগে প্রকাশ্যেই আঙুল উঁচিয়ে দলের নেতাকে বার বার ‘ধমক’ দিলেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে, চুঁচুড়া এবং চন্দননগরে বহু বিজেপি নেতা নড্ডার অনুষ্ঠানে ঢুকতে না পেরে বিক্ষোভ দেখান।
বুধবার বেলা ১২টা নড্ডার কনভয় উপস্থিত হয় চুঁচুড়া জোড়াঘাটে। তবে ঠিক তার আগে বন্দে মাতরম ভবনের সামনে দেখা যায়, হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় উত্তেজিত হয়ে বিজেপি রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহকে কিছু বলছেন। এমনকি, আঙুল তুলে তাঁকে ধমকাচ্ছেন। সে সময় লকেটের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা স্বপন পাল, সুবীর নাগ-সহ হুগলি জেলা সভাপতি তুষার মজুমদার। দীপাঞ্জন কিছু বলার চেষ্টা করলেও আঙুল তুলে তাঁকে শাসিয়ে যান সাংসদ। এর মধ্যে নড্ডা চলে আসায় সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মিনিট পনেরো থাকার পর চুঁচুড়া থেকে চন্দননগর চলে যান বিজেপি সভাপতি। সেখানেও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বচসা-মারামারি হয় বলে অভিযোগ। তাতে শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে বিজেপির এক কর্মী আহত হন বলে দাবি। চুঁচুড়া এবং চন্দননগরে নড্ডার অনুষ্ঠানে ঢুকতে না পেরে দীপাঞ্জনকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
বিজেপি সূত্রে খবর, নড্ডার অনুষ্ঠানে কারা থাকবেন, তার তালিকা তৈরির দায়িত্ব ছিল দীপাঞ্জনের উপর। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে দেখা যায়, হুগলি জেলার প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি সুবীর নাগ ও তাঁর অনুগামীরা সেখানে উপস্থিত।
প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না দেওয়ার লকেটে সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছিল বলে দাবি। নির্বাচনে লকেটের হয়ে কোনও কর্মসূচিতে দেখাও যায়নি তাঁকে। এমনকি, তৃণমূলে যোগ দেবেন বলেও জল্পনা হয়েছিল। তবে তিনি বিজেপিতে থাকলেও তাঁকে কোনও পদে রাখেনি দল। স্বাভাবিক ভাবেই বুধবারের অনুষ্ঠানে সুবীরের নাম ছিল না। অথচ অনুগামীদের নিয়ে বন্দে মাতরম ভবনে সকাল থেকে হাজির হন সুবীর। নড্ডার সঙ্গেও তাঁকে দেখা যায়। নড্ডাকে আমও উপহার দেন তিনি। অভিযোগ, এতেই ক্ষুব্ধ হন বিজেপির একাংশ। গোটা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ছিলেন দীপাঞ্জন। তিনি কেন এগুলি দেখেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিজেপির একাংশের দাবি, দীপাঞ্জনকে জনসমক্ষে কড়া হুঁশিয়ারি দেন লকেট।
চুঁচুড়ায় তর্কাতর্কিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও চন্দননগরে বচসা-মারামারি হয় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। যদিও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি বিজেপি নেতৃত্ব। মুখ খোলেননি লকেট বা দীপাঞ্জন। তবে সুবীর বলেন, ‘‘আমি বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য। পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি এসেছেন, তাই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে সাংসদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে অনুষ্ঠানে থাকতে বলেন। আমি সেখানে যাওয়ায় কোনও গন্ডগোল হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’’
সূত্রের খবর, কাটআউট কম লাগানো নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন লকেট। এ নিয়ে তৃণমূলের চন্দননগর শহর সভাপতি মুন্না এগ্রবাল বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে কোন্দল করাটাই বিজেপির সংস্কৃতি। এরা কী করে দেশ চালাচ্ছে সেটাই আশ্চর্যের। চুঁচুড়া, চন্দননগরে নিজেদের মধ্যে দুই গোষ্ঠীর লড়াই হচ্ছে।’’