রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল আগেই। পূর্ব মেদিনীপুরে তাদের বিদ্যুৎ বণ্টনের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যসচিব মলয় দে-র কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানাল ইন্ডিয়া পাওয়ার। পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রামীণ এলাকা তো বটেই, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলিকেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তুলনায় অনেকটা কম দামে বিদ্যুৎ দিতে পারবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। ইন্ডিয়া পাওয়ারের বক্তব্য, পূর্ব মেদিনীপুরে বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ না পেলে তারা হলদিয়ায় যে ৪৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছে, সেটি বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে যাবে।
ইন্ডিয়া পাওয়ার ১৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার মোট তিনটি ইউনিট গড়ে তুলেছে হলদিয়াতে। তিনটির মধ্যে একটি ইউনিট ইতিমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। বাকি দু’টি ইউনিটও এ বছরের শেষে উৎপাদনের জন্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেই উৎপাদিত বিদ্যুতের কিছুটা আসানসোল-রানিগঞ্জ এলাকায় বিক্রি করার সুযোগ থাকলেও, বাকি বিদ্যুৎ কে কিনবে — তা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি ইন্ডিয়া পাওয়ার। কারণ, যাদের উপর ভরসা করে হলদিয়ায় এই বেসরকারি সংস্থাটি ৩৫০০ কোটি টাকা খরচ করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছে, সেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা বছর দু’য়েক আগে তাদের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। এই অবস্থায় পূর্ব মেদিনীপুরে বিদ্যুৎ বেচার লাইসেন্স পেতে সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে সংস্থাটি।
চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে বন্টন সংস্থার যুক্তি ছিল, তাদের নিজেদের হাতে চাহিদা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ রয়েছে। তাই চুক্তি বাতিল না করলে সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হত।
ইন্ডিয়া পাওয়ারের এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটির জন্য বাম আমলে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ ১৯৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে দেয়। পরে তারা আরও ১৪ একর জমি সরাসরি জমি মালিকদের কাছ থেকে কেনে। ওই সময়ই ঠিক হয়, ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট সরকার কিনে নেবে। বাকি ১৫০ মেগাওয়াট ইন্ডিয়া পাওয়ার নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে পারবে।
ইন্ডিয়া পাওয়ারের এক কর্তা জানান, পূর্ব মেদিনীপুরে লাইসেন্স পেতে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছেও তাঁরা পিটিশন জমা দিয়েছেন। ২০০৩ সালে বিদ্যুৎ আইন মোতাবেক যা-যা শর্ত মেনে পিটিশন করতে হয়, সবক’টি মেনেই তাঁরা কমিশনের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু তার কোনও শুনানি হচ্ছে না বলেই ওই কর্তার অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, যে কারণেই এখন তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী দ্বারস্থ হয়েছেন। সংস্থাটির দাবি, হয় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সঙ্গে তাদের পুরনো চুক্তি বহাল রাখুক, নয়তো পূর্ব মেদিনীপুরের লইসেন্স দিক সরকার।