ব্রাত্য বসু এবং শশী পাঁজা। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে নিহত মহিলা চিকিৎসকের বাবা-মা বুধবার বলেছিলেন, পুলিশ তাঁদের টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এর পরে তৃণমূলের তরফে বৃহস্পতিবার আরও একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং শশী পাঁজা। সেই ভিডিয়োয় নির্যাতিতার বাবা-মাকে বলতে শোনা গিয়েছে, টাকা সংক্রান্ত অভিযোগ অসত্য। তৃণমূল প্রকাশিত ভিডিয়োটিতে তাঁদের বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘কে বলছে এটা? এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কে এসব প্রচার করছে? আমরা কখনও এসব বলিনি।’’ এই দু’টি ভিডিয়ো প্রকাশিত হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার রাতে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের আরও একটি বক্তব্য প্রকাশ্যে আসে। সেখানে তাঁদের বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘টাকা দেওয়া হয়নি’ কথাটি তাঁদের চাপ দিয়ে বলানো হয়েছিল।
তিনটি ভিডিয়োয় (আনন্দবাজার অনলাইন ওই ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি) নির্যাতিতার বাবা-মায়ের বিবিধ বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘টাকার অভিযোগটা কি সিবিআইকে দেওয়া বয়ানে ছিল? না থাকলে, কেন এত বড় অংশটা সিবিআইকে বলা হয়নি? আর যদি বলা হয়েই থাকে তা হলে সিবিআই এত দিন সংশ্লিষ্ট অফিসারকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করল না কেন?’’
বৃহস্পতিবার কিছুটা একই সুরে তৃণমূলের তরফে ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং শশী পাঁজাও সিবিআইকে তদন্ত করে দেখতে বলেছিলেন ওই অভিযোগ। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ওই অভিযোগ তাঁরা সিবিআইকে কেন জানাননি? বা বললে সিবিআই এত দিন কেন তার তদন্ত করেনি? বা সে বিষয়ে কাউকে কিছু জানায়নি?
ভিডিয়ো বিতর্কে ঠিক কী বলেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা? বৃহস্পতিবার এবিপি আনন্দ সম্প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে তাঁদের বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমাদের টাকা দিতে চেয়েছিলেন ডিসি (নর্থ)। মেয়েকে তখন ঘরে শুইয়ে রাখা আছে। আমাদের ঘরের ভিতরে রান্নাঘরের পাশের গলিতে ডেকে উনি টাকা দিতে চেয়েছিলেন। জবাবে আমরা ওঁকে বলি, আপনার কাঁধের ওই আইপিএস ব্যাজটা পেতে যত কষ্ট করতে হয়েছে, তার থেকেও বেশি পরিশ্রম করে ডাক্তারি পড়ছিল আমার মেয়ে। আর আজকে আপনি আমায় টাকার লোভ দেখাচ্ছেন!'' তাঁদের প্রশ্ন করা হয়, কিন্তু আপনারা যে ভিডিয়োতে বলছেন টাকা দেওয়া হয়নি? জবাব আসে, ‘‘যে হেতু কলকাতা পুলিশের হাতে তদন্ত ছিল। সেই জন্য ওই ভিডিয়োটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম।’’ নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীকে বিষয়টা মেয়ের মা জানিয়েছিল। তিনি পরে সাংবাদিক বৈঠক করেন। আমরা প্রথমে জানাইনি।’’
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের বুধবারের কর্মসূচিতে ‘টাকা’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে অনেকগুলি অভিযোগ করেছিলেন। নির্যাতিতার বাবা বলেছিলেন, ‘‘আমরা দেহ রেখে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ৩০০-৪০০ পুলিশ টালা থানা ঘিরে রেখেছিল। আমরা সেখান থেকে ফিরে যাই। দেহ দাহ করতে দিতে বাধ্য হই আমরা। মেয়ের দেহ যখন বাড়িতে তখন ডিসি নর্থ ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমরা আমাদের মতো জবাব দিই।’’ এমনকি, তাঁদের সাদা কাগজে সই করানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বৃহস্পতিবারও তাঁরা বলেছেন, ‘‘পুলিশ প্রথম থেকে আমাদের চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কাল ওঁদের বিরুদ্ধে আমাদের আরও অভিযোগ ছিল। আমাদের প্রশ্ন ছিল, কেন ঘটনার পরে জায়গাটা সিল করা হয়নি? কেন তার পর দিনই সেমিনার রুমের পাশের ঘরটা ভেঙে দেওয়া হল?’’
যদিও তৃণমূলের পাল্টা প্রশ্ন, যদি তাই হবে, তবে এখন তো সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত রয়েছে। তারা ওই সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করছে না কেন? যদিও এব্যাপারে নির্যাতিতার বাবা-মাকে কোনও রকম প্রশ্ন না করার আবেদন করে তৃণমূল বলেছে, ‘‘আমরা সবই শুনেছি। অনেক রাজনৈতিক দল এই সময় রাজনীতি করছে। তাঁদের কাছে আমাদের অনুরোধ ওঁরা অত্যন্ত শোক সন্তপ্ত। একমাত্র সন্তানকে তাঁরা হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ওঁদের কথা নিয়ে আমরা কিছু বলব না। অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও অনুরোধ করব, এমন কিছু না করতে।’’
কুণাল কিংবা ব্রাত্য, শশীদের প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিলেও রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্যাতিতার বাবা-মা গত কাল বলেন, তাঁদের গলিতে দাঁড়িয়ে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আজ তৃণমূল কেন সাংবাদিক বৈঠক করছে। উত্তরটা বরং দিন ডিসি (নর্থ)। ১৪ তারিখের পর থেকে ডিসি (নর্থ)কে কলকাতা পুলিশ আড়াল করে রেখেছেন এবং তার বদলে ডিসি (সেন্ট্রাল) কথা বলছেন কেন? আর তা ছাড়া ১৪ অগস্ট রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তো বলেছিলেন, আমরা ওদের ১০ লক্ষ টাকা দেব। এখন তৃণমূল মামলা প্রভাবিত হতে পারে বুঝে ওঁদের চাপ দিয়ে এই সব ভিডিয়ো বানাচ্ছে কেন?’’