প্রতীকী ছবি।
নবান্নে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটের বাড়ির চৌকাঠ ডিঙোতেই দেখেন, সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা আইএএস অফিসার এবং তাঁর দিল্লিবাসী ব্যবসায়ী স্বামী। স্ত্রীর বদলির আবেদন জানাতেই বুধবার সাতসকালে মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে হাজির ব্যবসায়ী।
বেঙ্গল ক্যাডারের আইএএস অফিসার মনমিত নন্দাকে নিয়ে নিখিল নন্দা নামে ওই ব্যবসায়ীর এই দরবার নিয়ে প্রশাসনিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কেননা এর আগে অনেক আমলা বদলির জন্য নানা ভাবে আবেদন-নিবেদন করলেও স্বামীকে নিয়ে এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হাজির হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। ওই যুগলের অনুরোধ, পরিবারের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করতে মনমিতকে নবান্ন যেন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারে যাওয়ার অনুমতি দেয়। সেই আবেদন মঞ্জুর তো হয়ইনি, উল্টে মুখ্যমন্ত্রী ওই আইএএস অফিসারকে অবিলম্বে রাজ্যে এসে কাজে যোগ দিতে বলেছেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেই মনমিত ও নিখিল নবান্নে মুখ্যসচিব মলয় দে-র সঙ্গে দেখা করতে যান। ওই আইএএস অফিসারের স্বামী এর আগেও মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরপর বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় মলয়বাবু তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি।
হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক ছিলেন মনমিত। তখন থেকেই কেন্দ্রে যোগ দিতে চেয়ে বারবার আবেদন করতে থাকেন তিনি। তাঁর স্বামী দিল্লির প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সেই জন্যই তাঁর দিল্লি যাওয়া দরকার বলে নবান্নের কাছে আর্জি জানান প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর প্রাক্তন ব্যক্তিগত সচিব মনমিত। কিন্তু সরকার তাঁকে রাজ্যেই কাজ করতে বলে। বদলি না-হওয়ায় ২০১৬-র মাঝামাঝি ছুটি নিয়ে দিল্লি চলে যান তিনি। ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত সরকার ছুটি মঞ্জুর করেছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই অফিসার আরও ছুটির জন্য আবেদন জানান। তা মঞ্জুর হয়নি। উল্টে তাঁর অসুস্থতা ঠিক কী ধরনের, তা জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য ভবনের মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে তাঁকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেই স্বামী-স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হাজির হন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। মনমিত নিজে এই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।
শুধু মনমিত নন, দিল্লি যেতে চেয়ে আরও অনেক আইএএস অফিসার নবান্নের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছেন। অন্তত সাত জন আইএএস অফিসার ভিন্ রাজ্যের অফিসারদের বিয়ে করে অন্য ক্যাডারে চলে যেতে চেয়েছেন। তাঁদের কারও অনুরোধই মানেননি মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের অফিসারদের দিল্লির জন্য ছেড়ে দিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও অনুরোধ করা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। তাতেও অবস্থা বদলায়নি। অনেক ক্ষেত্রে অফিসারেরা বদলি চেয়ে কেন্দ্রীয় ট্রাইবুনালে গিয়েছেন। সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়াতেও লিখে চলেছেন অনেকে।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘আইএএস-আইপিএস অফিসারদের বদলি নীতি একই থাকছে।’’