কাঁটার আসনে বসেছি, ফিরে বলছেন সোমেন

বিধান ভবনে এখনও প্রদেশ সভাপতির ঘরে বসতে শুরু করেননি সোমেন মিত্র। বসছেন ছ’তলায় তাঁর বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ঘরে। সেখানেই ভিড় জমাচ্ছেন সাক্ষাৎ-প্রত্যাশীরা

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২৬
Share:

ফাইল চিত্র।

দায়িত্ব নিয়েছেন সবে ৪৮ ঘণ্টা। প্রদেশ কংগ্রেসের নবনিযুক্ত সভাপতি বুঝতে পারছেন, তিনি বসেছেন ‘কাঁটার আসনে! এবং খোলাখুলি মানছেন, তিনি ‘হারকিউলিস’ নন!

Advertisement

বিধান ভবনে এখনও প্রদেশ সভাপতির ঘরে বসতে শুরু করেননি সোমেন মিত্র। বসছেন ছ’তলায় তাঁর বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ঘরে। সেখানেই ভিড় জমাচ্ছেন সাক্ষাৎ-প্রত্যাশীরা। বিধান ভবনের পথ ভুলেছিলেন বেশ দীর্ঘ দিন, এমন অনেকেই আবার হাজির পুরনো ঠিকানায়। আর এ সব সামলানোর ফাঁকেই ৭৫ বছরের ‘ছোড়দা’ বলছেন, ‘‘কাঁটার আসনে বসতে যেমন লাগে, এটাও তেমনই! কুড়ি বছর আগে যখন প্রদেশ সভাপতির পদ ছেড়েছিলাম, তার থেকে অবস্থা এখন অনেক কঠিন। তখন বাংলায় এ ভাবে বিজেপির রমরমা শুরু হয়নি। সব চেয়ে বড় কথা, তখন তৃণমূলের এমন আগ্রাসন ছিল না।’’ ভাঙন-বিধ্বস্ত কংগ্রেসের হাল ধরা যে কঠিন চ্যালেঞ্জ, তা স্বীকার করেই সোমেনবাবুর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের হাতে সংগঠনটা ক্রমশ ভেঙে চলেছে। সেটা সামলে তার পরে তো ঘুরে দাঁড়ানোর ভাবনা!’’

লোকসভা নির্বাচনের বেশি দেরি নেই। তার মধ্যেই বাংলায় কংগ্রেসকে রাতারাতি চাঙ্গা করে তোলা যাবে, এমন আশা অবশ্য দলের কোনও নেতাই করছেন না। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান যেমন বলছেন, ‘‘অধীর চৌধুরী বা সোমেন মিত্র— কারও হাতেই আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নেই!’’ সোমেনবাবু নিজেও মানছেন, ‘‘আমি হারকিউলিস নই! সবাই মিলে চেষ্টা করতে হবে, সময় লাগবে।’’

Advertisement

কঠিন দায়িত্ব নিয়ে আপাতত সোমেনবাবুর চেষ্টা ভাঙা সংসার জোড়া লাগানোর। রাহুল গাঁধীর নির্দেশে যে কমিটি হয়েছে, সেই তালিকার প্রত্যেকের সঙ্গেই ৪৮ ঘণ্টায় যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন তিনি। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী ইলাহাবাদ চলে যাবেন বলে রবিবার সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি তাঁর সাক্ষাতের সময় পেয়ে বিধান ভবন থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে সদ্যপ্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি অধীরবাবুর সঙ্গেও। অধীরবাবু অবশ্য তখন দিল্লির উড়ান ধরতে বিমানবন্দরে। কলকাতার রাজনীতিতে যাঁদের বিশেষ দেখা যায় না, তাঁদের মধ্যে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও রাজভবন গিয়েছেন। ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, অমিতাভ চক্রবর্তী, শুভঙ্কর সরকারেরা। দুই কার্যকরী সভাপতি দীপা দাশমুন্সি গিয়েছেন ইসলামপুর, আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী আজ, সোমবারই আসছেন সোমেনবাবুর কাছে। আর এই তালিকার বাইরে থাকা মান্নান হাঁটুর অস্ত্রোপচার সেরে এ দিনই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন এবং তাঁকেও ফোনে ধরে নিয়েছেন সোমেনবাবু।

আরও পড়ুন: পুলিশকে গাছে বেঁধে মারুন, হুমকি দিয়ে ধৃত বিজেপি নেতা

মানা বদলের সঙ্গে সঙ্গে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা অবশ্য ঘটছে। বিধান ভবন চত্বরেই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর হাতে অধীর শিবিরের কেউ কেউ নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ। ডালুবাবু আবার একটি সাক্ষাৎকারে অধীরবাবুর বিরুদ্ধে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যার জন্য শৃঙ্খলাভঙ্গের নালিশ গিয়েছে স্বয়ং রাহুলের কাছে। সোমেনবাবুর আবেদন, নেতা-কর্মীরা যেন সংযত থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই দিল্লির ডাক এসে গেল।’’ এআইসিসি নতুন প্রদেশ নেতৃত্বকে বৈঠকে ডেকেছে ২৯ সেপ্টেম্বর। ফিরেই রাজ্যে কমিটি নিয়ে বসবেন প্রদেশ সভাপতি। আর রাহুলকে অনুরোধ করতে চান দীপাবলির পরে রাজ্যে এসে সভা করার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement