মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের দিন কলকাতায় সর্ব ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংহতি মিছিল করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহারের প্রশাসনিক সভা থেকে নাম না করে বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুললেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘ওরা যেটা চাপিয়ে দেবে, সেটাই যেন দেবতা। আমি তো বিরোধিতা করিনি। আমি বলেছি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’’ এখানেই থামেননি তিনি। বলেন, ‘‘ওরা যাকে দেবতা মানবে আমাকেও তাকে মানতে হবে? এ সব করতে আমি বাধ্য নই। আমি রামায়ণ পড়েছি। বাইবেল পড়েছি। গ্রন্থসাহেব পড়েছি। ত্রিপিটক পড়েছি।’’ ভোট এলে বিজেপি নেতারা যে ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের বাড়িতে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন, সোমবার তা নিয়েও খোঁচা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে যে মেয়েটি থাকে, সে তফসিলি। আমায় ভোটের আগে তফসিলিদের বাড়িতে খেয়ে সেটা বোঝাতে হয় না।’’
গত ২২ জানুয়ারি তৃণমূলের ‘সংহতি মিছিল’ শেষে পার্ক সার্কাসের সভা থেকে মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে মহিলা বিদ্বেষের অভিযোগকে লোকসভা ভোটে প্রচারের অভিমুখ করতে চলেছেন। সে দিন মমতা বলেছিলেন, ‘‘সীতা ছাড়া কি রাম হয়? কিন্তু ওরা সীতামায়ের কথা বলে না। কৌশল্যা কোথায় গেলেন? মা কৌশল্যাদেবী ছাড়া তো রামের জন্মই হত না!’’ সোমবার কোচবিহারের প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘ওদের মুখে সীতামায়ের নাম নেই। কৌশল্যার নাম নেই। সীতার অগ্নিপরীক্ষা, পাতালপ্রবেশ মনে আছে তো?’’
২০২১ সালের ভোটের সময়ে যখন বিজেপি ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে বাংলাময় করার চেষ্টা করেছিল, তখনও মমতা বলেছিলেন, ‘‘রাম অকালবোধন করে মা দুর্গার পুজো করেছিলেন। রাম যাঁর পুজো করেছিলেন, আমরা তাঁর পুজো করি।’’ সোমবারও মমতা বলেন, ‘‘ওদের মুখে মদনমোহন মন্দিরের কথা নেই, জল্পেশ্বরের কথা নেই, মা দুর্গার কথা নেই।’’ প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে ফের এক বার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন মমতা।
গত লোকসভা ভোটে কোচবিহার আসন জিতেছিল বিজেপি। এক সময়ের যুব তৃণমূল নেতা পরে সেই দল ছেড়ে দেওয়া নিশীথ প্রামাণিককে প্রার্থী করে গেরুয়া শিবির। তিনি শুধু জেতেননি, পরে তাঁকে কেন্দ্রের মন্ত্রীও করা হয়। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। অমিত শাহের ‘ডেপুটি’। সেই কোচবিহারে সোমবার মমতা বলেন, ‘‘মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দল পরোক্ষে যোগাযোগ রাখছে। আমি বলব, আপনাদের সব দিই আমরা। আপনারা ওদের কথা শুনবেন না।’’ রবিবার উত্তরবঙ্গে পৌঁছন মমতা। সোমবার কোচবিহারের পর তাঁর কর্মসূচি রয়েছে উত্তরবঙ্গের সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’য়।