— ছবি সংগৃহীত
এক দিকে জনজাতি গোষ্ঠীর চিরাচরিত প্রথা এবং অন্য দিকে বন্যপ্রাণী বাঁচানোর আবশ্যিকতা। এই দুইয়ের মধ্যে প্রতি বছরই ‘শিকার উৎসব’ নিয়ে জঙ্গলমহল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা মূলত বন্যপ্রাণী শিকারকে কেন্দ্র করেই। এই পরিস্থিতিতে জনজাতি গোষ্ঠীর শিকার উৎসবকে নির্দিষ্ট কাঠামোয় বাঁধতে চাইছে বন দফতর, যাতে বন্যপ্রাণীরা বাঁচে আর জনজাতিদের গোষ্ঠীগত আচার-সংস্কারও বজায় থাকে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) বিনোদকুমার যাদব জানান, আগামী বছর থেকে নতুন ধাঁচে শিকার উৎসব চালু করতে চাইছেন তাঁরা। সেই উৎসবে বন্যপ্রাণ নিধন হবে না। তার বদলে থাকবে তিরন্দাজি, বর্শা ছোড়ার মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বনকর্তারা জানাচ্ছেন, বন্যপ্রাণ এবং জনজাতিদের সংস্কৃতি, দু’টিই যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা।
বৈশাখ মাসের শিকার উৎসবে জনজাতি গোষ্ঠীর লোকেরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন এবং পাখি, কাঠবেড়ালি, গোসাপ, শজারু-সহ বিভিন্ন প্রাণী শিকার করেন। এই উৎসব তাঁদের সংস্কৃতিতে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু বর্তমান আইনে বন্যপ্রাণ শিকার নিষিদ্ধ। বন দফতর ও বন্যপ্রাণপ্রেমীরা বুঝিয়েসুজিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনজাতিদের নিরস্ত করলেও অনেক জায়গায় শিকার হয়। শুক্রবারেও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের শিকার হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বন্যপ্রাণপ্রেমীরা। অনেকেই বলছেন, শিকারে বাধা দিলে কখনও কখনও শিকার উৎসবে শামিল লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বনকর্তারা মনে করছেন, এই উৎসবের কোনও প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা না-থাকার ফলেই লোকজন দল বেঁধে বিক্ষিপ্ত ভাবে বেরিয়ে পড়েন। তার বদলে যদি সংগঠিত ভাবে উৎসবের আয়োজন করা যায়, বিপত্তি কমতে পারে।
বনকর্তারা জানান, বন্যপ্রাণ শিকার ঠেকাতে তাঁরা জনজাতি গোষ্ঠীগুলির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে জেলা ও রেঞ্জ স্তরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। ওই জেলাগুলিতেই জনজাতি গোষ্ঠীর বসবাস বেশি। তবে বন্যপ্রাণপ্রেমীদের অনেকে বলছেন, এমন পরিকল্পনা আরও আগে করা যেতে পারত। সম্প্রতি বন্যপ্রাণ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করেছে। তাতে এই শিকার উৎসবের প্রসঙ্গ উঠেছে। এই প্রেক্ষিতেই নতুন ভাবনা বনকর্তাদের মনে এসেছে বলে বন্যপ্রাণপ্রেমীদের অনেকে মনে করছেন।