সিংমারিতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনা। —নিজস্ব চিত্র।
ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে পাহাড়ের পরিস্থিতি। অশান্তির আগুন জ্বলছে ক’দিন ধরেই। আজ গুলি আর খুকরির কোপে রক্তাক্তও হল দার্জিলিং। সকাল থেকেই একটু একটু করে উত্তাপ বাড়তে থাকে পাহাড়ে। একটা সময়ের পর পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে মোর্চা-পুলিশ তুমুল সংঘর্ষে। সবচেয়ে বেশি অশান্তি ছড়ায় সিংমারি এলাকায়। এখানেই সেন্ট জোসেফ কলেজের সামনে গুলিতে দুই মোর্চা কর্মীর মৃত্যু হয়। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিনয় তামাং-এর দাবি, পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আরও দুই মোর্চা কর্মী। গ্রেফতার করা হয় ৭ জন মোর্চা সমর্থককে। যদিও গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেনি পুলিশ। উল্টে মোর্চা সমর্থকরাই গুলি চালিয়েছে বলে দাবি এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মার। ঘুমেও পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। এর মধ্যেই সিংমারি পুলিশ ক্যাম্পের কাছে কিরণ তামাঙ্গ নামে পুলিশের রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্টকে খুকরি দিয়ে কোপান মোর্চার বিক্ষোভকারীরা। কিরণ মারা গিয়েছেন বলে প্রথমে সরকারি ভাবে ঘোষণা হলেও, পরে জানানো হয় তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
দেখুন ভিডিও:
সকাল থেকে অগ্নিগর্ভ হয়ে থাকা সিংমারিতে মোর্চা-পুলিশ সংঘর্ষ থামে দুপুরে সেনা নামানোর পর। রুট মার্চ করে কাউকে ঘর থেকে বেরোতে নিষেধ করে দেয় সেনা। সংঘর্ষ থামলেও, পরিস্থিতি পুরোপুরি থমথমে। মোর্চার পক্ষ থেকে গুলিতে মৃত্যুর ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়েছে। অন্য দিকে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, মোর্চা এ ধরনের তাণ্ডব চালালে সরকার কড়া হাতেই তার মোকাবিলা করবে। নবান্ন থেকে একই বার্তা দিয়েছেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাও। এর পরই এক বিবৃতিতে বিমল গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘কড়া জবাব দিতে হবে। সবাইকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রশাসনের বিরোধিতা করতে হবে। যে সমস্ত মোর্চা শহিদ হয়েছেন। তাঁদের সেলাম।’’
সিংমারিতে গুলিবিদ্ধদের দু’জন
আরও পড়ুন: গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেলের ত্রিস্তরীয় সুরক্ষা বলয়ে ডেরা পাল্টে ঘুরছেন গুরুঙ্গ
গত বৃহস্পতিবার বিমল গুরুঙ্গের অফিসে আচমকা পুলিশি তল্লাশির পর পাহাড়ে নতুন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পরিস্থিতি। এর পর শুক্রবার মধ্যরাতে মোর্চা নেতা বিক্রম রাইকে তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। সেন্ট জোসেফ কলেজের অধ্যাপক বিক্রম গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মিডিয়া অ্যাডভাইজার। তাঁর বাবা অমর রাই দার্জিলিঙের মোর্চা বিধায়ক। বিক্রমকে আটক করার পাশাপাশি কাল রাতেই পুলিশ তল্লাশি চালায় বিমল গুরুঙ্গের ঘনিষ্ঠ বিনয় তামাঙ্গের বাড়িতে। বিনয়ের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়ে গেছেন কিছু তৃণমূল সমর্থক।
নেমেছে সেনা
এই দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সিংমারি এলাকা। গোলমাল, উত্তেজনা ছড়াতে থাকে অন্যত্রও। ক্রমশ রণক্ষেত্রের চেহারা নিতে থাকে পাহাড়। কয়েক হাজার মোর্চা সমর্থক পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করতে থাকেন। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করতে গিয়েও পিছিয়ে যেতে হয় পুলিশকে। এর পর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের হঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বিশাল জনতাকে তাতেও থামানো যায়নি। আটটা গাড়িতে আগুন ধরানো হয়। জলঢাকা থানায় হামলা চালান মোর্চা সমর্থকেরা। এমনই একটি গাড়ি জ্বালানোর সময় সিংমারি পুলিশ ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে মোর্চা কর্মীদের বাধা দিয়েছিলেন এসিপি কিরণ তামাঙ্গ। তখনই তাঁকে খুকরি দিয়ে কোপানো হয়। ঘাড়ে, পিঠে গুরুতর আঘাত আর প্রচুর রক্তপাতের জেরে কিরণের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। দুপুরে নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন যে কিরণ মারা গিয়েছেন। একটু পরেই অবশ্য তা সংশোধন করে মমতা জানান, তাঁর কাছে ভুল খবর এসেছিল। কিরণ মারা যাননি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগামীকাল ১২ ঘণ্টার জন্য ডুয়ার্সে বনধ্ ডেকেছে মোর্চা।
কিরণ ছাড়াও মোর্চার ছোড়া ইটে কমবেশি আহত হয়েছেন আরও ৩৪ জন পুলিশকর্মী। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনের চিকিৎসা চলছে দার্জিলিঙের হাসপাতালে।