বহু রঙা ভারতের জনতার স্রোত এসে মিশেছে সাগরে। ছবি: পিটিআই।
সমুদ্র তটে জনজোয়ার। কপিল মুনির আশ্রমে পুণ্যার্থীদের ঢল। সাধুদের আশীর্বাদ নিতে ভক্তদের ভিড়। বহু রঙা ভারতের জনতার স্রোত এসে মিশেছে সাগরে। শুরু হয়েছে পূণ্যস্নান।
পুণ্যস্নানের সময় যত এগিয়ে আসছে, ভিড় বাড়ছে সাগরে। এসেছেন বহু বিদেশিও। এ বার গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের সময় রবিবার রাত ১২টা ১৩ থেকে সোমবার রাত ১২টা ১৩ পর্যন্ত। রবিবার সকাল থেকে নানা বয়সের নারী-পুরুষের ভিড় ঘাটের পথে। কারও মাথায় বোঁচকা-ব্যাগ। পুণ্যার্থীদের পায়ে পায়ে উড়ছে ধুলো। ঘাটের হাল খারাপ। এত দিন বন্ধ ছিল তিন নম্বর ঘাটের গেট। তীর্থযাত্রীদের ভিড়ের চাপ সামাল দিতে এ দিন সকাল থেকে সেই গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এক পুলিশকর্মী বলেন, “প্রথমে এই গেট দিয়ে শুধু পুণ্যার্থীদের বার করা হচ্ছিল। কিন্তু পুণ্যার্থীদের চাপ বাড়ায় সকাল ৮টা থেকে গেট ঢোকা-বেরোনো দু’টি কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে।”
সাগরে স্নান সেরে কালনার আরতি সাহা এবং জ্যোৎস্না পাল গরুর লেজ ধরে বললেন, “বৈতরণী পার হলাম।” পুণ্যার্থীদের একটা ভিড় তখন কপিল মুনির আশ্রমের পথে। পুজো দিতে আশ্রমে তখন প্রবল ভিড়। তা দেখে পুজো না দিয়েই ফিরে গেলেন অনেকে। ছেলে রণবীর এবং মেয়ে ধর্মশীলা কুমারীকে নিয়ে বিহারের বৈশালী থেকে এসেছেন রামশকল চৌধুরি। কপিল মুনির আশ্রমের ভিড় এড়িয়ে ধর্মশীলা বলেন, “এই ভিড়ে পুজো দিতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। এখান থেকে আজই কলকাতায় যাব। দু'দিন কলকাতা ঘুরব।” কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দিলেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
পুণ্যস্নানের জন্য আজ, সোমবার ভিড় যে আরও বাড়বে, তা জেনেই এ দিনই স্নান সেরে নিয়েছেন শশী সারদানারা। দিল্লির বাসিন্দা এই মহিলা সাত বন্ধুর সঙ্গে এসেছেন গঙ্গাসাগরে। শশী এবং সরিতা গুপ্ত বেরিয়েছিলেন নাগা সাধু দর্শনে। আগ্রা থেকে আসা ওমপ্রকাশ সিংহের বেশ কয়েক জন মহিলাকে নিয়ে লাইন করে হাঁটছিলেন। যাতে হারিয়ে না-যান, তাই পিছনের মহিলা সামনের জনের শাড়ির আঁচল আর একবারে সামনের মহিলা ওমপ্রকাশের চাদরের খুঁট ধরেছিলেন। উত্তরপ্রদেশের জওয়ানপুর থেকে মা নির্মলা পাণ্ডেকে নিয়ে এসেছেন নাগেন্দ্র। নাগা সাধুর আশির্বাদ নিতে ছেলেকে ঠেলে দেন নির্মলা। ফিরে এসে নাগেন্দ্রর খেদোক্তি, “বাবা কী বললেন, কিছুই বুঝলাম না। এত ভিড়, ঠেলাঠেলি আর চিৎকার।”
মেলা ঘুরে দেখেছেন তিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পুলক রায়, পার্থ ভৌমিক। অরূপ জানান, রবিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৬৫ লক্ষ পুণ্যার্থী স্নান করেছেন। মেলায় হারিয়ে যাওয়া ২৮৪৬ জনের মধ্যে ২৮১০ জনকে খুঁজে পরিজনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাগরে আসার পথে মারা গিয়েছেন রাজস্থানের মোহনলাল প্রজাপত এবং দিল্লির চন্দ্রপাল। স্থানীয় সূত্রে অবশ্য খবর, এ বছর সাগর মেলায় এসে এখনও পর্যন্ত চার জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকালে হরিয়ানার সিরসা এলাকার বাসিন্দা ওম প্রকাশ (৬৮) গঙ্গাসাগরে সমুদ্রতটে স্নান করতে নেমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা তাঁকে অস্থায়ী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসকেরা তাঁরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সন্ধ্যায় এক নম্বর ঘাটে গঙ্গা আরতি করেন পুরীর শঙ্করাচার্য। মেলায় তখনও পুণ্যার্থীদের ঢল। সেই ঢল চলেছে ঘাটের দিকে। কপিল মুনির আশ্রমের দিকে।