Jatiyo Bangla Sammelan

বাংলা পক্ষে ভাঙন, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির অভিযোগ এনে তৈরি হল পৃথক সংগঠন

‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর আবেগকে ভিত্তি করেই ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে আত্মপ্রকাশ করেছিল গর্গর সংগঠন বাংলা পক্ষ। কিন্তু, বছর ঘোরার আগে সেই সংগঠনে হানা দিল ক্ষয়রোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:৩২
Share:

গর্গ চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

দলীয় কোন্দল ধাক্কা দিয়েছিল আগেই। তা শেষ পর্যন্ত সামলাতে না পেরে দু’টুকরো হয়ে গেল বাংলা পক্ষ। সোমবার গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের সেই সংগঠন ভেঙেই আত্মপ্রকাশ করল জাতীয় বাংলা সম্মেলন নামে নতুন একটি সংগঠন। নয়া সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, শুরুতে সংগঠনের যে রাজনৈতিক পথ ছিল তা ক্রমশ ‘বিদ্বেষের রাজনীতিতে’ পরিণত হয়েছে। বাংলা পক্ষ ‘হিন্দুত্ববাদী বাঙালির’ স্বপক্ষে প্রচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁদের। তবে গর্গর অবশ্য দাবি, বাংলা পক্ষ থেকে বহিষ্কৃতরাই এই নতুন সংগঠন তৈরি করেছেন।

Advertisement

‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর আবেগকে ভিত্তি করেই ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে আত্মপ্রকাশ করেছিল গর্গর সংগঠন বাংলা পক্ষ। কিন্তু, বছর ঘোরার আগে সেই সংগঠনে হানা দিল ক্ষয়রোগ। এ দিন ওই সংগঠন ভেঙেই জন্ম নিল জাতীয় বাংলা সম্মেলন নামে নতুন একটি সংগঠন। কিন্তু, কেন নতুন সংগঠন তৈরি করতে হল?

নতুন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দাগলেন পুরোন সংগঠনের বিরুদ্ধেই। তাঁর দাবি, ‘‘বাংলা পক্ষের নেতৃত্বের একাংশ বাঙালির অধিকার অর্জনের সংগ্রামের তুলনায় জাতিবিদ্বেষী এবং জাতিবাদী কর্মকাণ্ডে বেশি মনোনিবেশ করেছেন। তাঁরা হিন্দুত্ববাদী বাঙালির স্বপক্ষে প্রচার করাটাকে বেশি গুরুত্ব দেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: যাদবপুরের এটিএম জালিয়াতি কাণ্ডে গ্রেফতার ১ রোমানীয়

‘বিদ্বেষধর্মী রাজনীতি’ বলতে ঠিক কী বলতে চাইছেন নয়া সংগঠনের নেতারা? আইএসআই-এর গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা পক্ষের বিরুদ্ধে বাঙালি প্রেমের নামে একাধিক বার অবাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। আর এ সব নিয়ে ‘অসহিষ্ণুতা’র অভিযোগের তালিকা ক্রমশ লম্বা হয়েছে বাংলা পক্ষের বিরুদ্ধে। অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট অভিযোগ, ‘‘বাংলা পক্ষের গোড়ার কথা ভুলে একটি বিদ্বেষধর্মী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এটা বাংলা পক্ষের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।’’

জাতীয় বাংলা সম্মেলনের নেতাদের দাবি, ভাঙনের প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। তাঁদের মতে, এক সঙ্গে পথ চলা শুরু করলেও, যত দিন যাচ্ছিল বাংলা পক্ষের কাজকর্মের সঙ্গে তাঁদের মতাদর্শ গত বিভেদ ততই চরমে উঠছিল। শেষ পর্যন্ত ২৭ অক্টোবর বাংলা পক্ষ সংগঠনটিতে আড়াআড়ি ফাটল ধরে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং জেলা স্তরের একাংশ সদস্য মিলে নতুন রাজনৈতিক সংগঠন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করল জাতীয় বাংলা সম্মেলন। নতুন সংগঠনের লক্ষ্য কী? কার্যকরী সভাপতি অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিদ্বেষ নয়, মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনই আমাদের মূল লক্ষ্য হতে চলেছে। বাঙালি আবেগকে সামনে রেখে বাংলা পক্ষ নিজের যে পরিচয় তৈরি করেছে তা ছেড়ে বেরিয়ে বাংলার বাইরের মানুষের অধিকার আন্দোলনেও নামবে এই নতুন সংগঠনটি।’’ মাতৃভাষা, পরিবেশ ছাড়াও একাধিক রাজনৈতিক দাবিও তুলে ধরতে চলেছে নতুন এই সংগঠনটি। তবে, জাতীয় বাংলা সম্মেলনের আন্দোলনের ক্ষেত্র আপাতত এ রাজ্যের পরিসরেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

আরও পড়ুন: সিএবি-এনআরসি একই মুদ্রার দু’পিঠ, এক জনকেও তাড়াতে দেব না: খড়্গপুরে হুঙ্কার মমতার

সদ্য আত্মপ্রকাশ করা সংগঠন যে ‘হিন্দুত্ববাদ’-এর অভিযোগ বাংলা পক্ষের বিরুদ্ধে তুলেছে, তা কিন্তু বাংলা পক্ষের প্রধান গর্গ এ দিন পুরোপুরি নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে তো বলা হচ্ছিল বাংলা পক্ষ হল জামাতি। কেউ কেউ বলছিলেন বাংলা পক্ষ চলছে তৃণমূলের মদতে। এখন আবার বলা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী। এত কিছু তো একসঙ্গে হওয়া সম্ভব নয়। এগুলোর মধ্যে যে কোনও একটা হওয়া সম্ভব। কোন অভিযোগটা তোলা হবে, তা আগে স্থির করে নিলে ভাল হয়।’’

বাংলা পক্ষের বিরুদ্ধে অসমের বিজেপি সরকার অভিযোগ দায়ের করেছে বলে গর্গ এ দিন জানান। হিন্দুত্ববাদী বা বিজেপি-ঘনিষ্ঠ হলে তেমনটা হত না বলে যুক্তিও তুলে ধরেছেন তিনি। তবে এ দিন আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় বাংলা সম্মেলনকে গর্গ আক্রমণ করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা পক্ষে ভাঙন হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার কারণে যাঁদের আমরা বহিষ্কার করেছিলাম, তাঁরা নতুন সংগঠন তৈরি করেছেন। তবে তাঁদের প্রতি আমার শুভেচ্ছাই থাকবে। বাংলা এবং বাঙালির স্বার্থ নিয়ে যাঁরা লড়বেন, তাঁদের সকলের প্রতিই আমার শুভেচ্ছা থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement