ডোমজুড়ে সরস্বতী নদীর অবস্থা। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
দীর্ঘ চার বছর ধরে সরস্বতী নদীর সংস্কারের কাজ চলার পরেও তার অবস্থার কোনও পরিবর্তনই হয়নি বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। জঞ্জাল, কচুরিপানা আর দু’ধারে দখলদারির জেরে নদী বলে সরস্বতীকে চেনা দুষ্কর। বেশ কিছু এলাকায় খালের পাড়ে নেমেছে ধস। নদীর পাড়ের কংক্রিটের স্ল্যাব ঢাকা পড়েছে জঙ্গলে। কিছু কিছু এলাকায় ওই স্ল্যাবগুলি ধসে নদীতে নেমে গিয়েছে।
হাওড়া বলুহাটি থেকে সাঁকরাইলে হুগলি নদীর মোহনা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার এলাকায় প্রশাসনের তরফে প্রথম সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি। তবে সেই সময় জমি সংক্রান্ত নানা ঝামেলায় বেশ কিছু এলাকার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর পর সেচ দফতরের তত্ত্বাবধানে ২০০৮ সালের ৫ এপ্রিল ফের সরস্বতী নদীর সংস্কারের কাজ শুরু হয়। কিন্তু সেই কাজও অনিয়মিত ভাবে হয় বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ। ২০১২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ওই কাজ শেষ হয়। এই সংস্কারের জন্য ৩২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছিল। টাকার ৭৫ শতাংশ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার এবং ২৫ শতাংশ দেয় রাজ্য সরকার।
বহুকাল আগে যথেষ্ট প্রবাহ ছিল এই সরস্বতী নদীতে। নদীতে বড় বড় নৌকাও চলাচল করত। নদীকে মাছ ধরে জীবিকা চালাতেন মৎস্যজীবীরা। ব্যবসায়ীরা ও এলাকার বাসিন্দারা নৌকায় মালপত্র আনা- নেওয়া করতেন। কিন্তু ক্রমশ মজতে থাকা নদীতে সংস্কারের কোনও উদ্যোগই ছিল না। ফলে প্রবাহ কমতে কমতে এক সময় তা মরা নদীতে পরিণত হয়। সুযোগ বুঝে নদীর দু’পাশে শুরু হয়ে যায় জবরদখল। নদীর বুকে অবাধে ফেলা হতে থাকে আবর্জনা।
এই অবস্থার প্রতিকারে এবং সরস্বতী নদী সংস্কারের দাবিতে এগিয়ে আসে সরস্বতী নদী সংস্কার কমিটি। এর পর প্রশাসন সংস্কারের কাজ শুরু করে। কিন্তু সঠিক সংস্কারের অভাবে ফের বেহাল হয়ে পড়েছে নদী।
ডোমজুড়ের বাসিন্দা কাশীনাথ পাড়ুই বলেন, শুনেছিলাম সরস্বতী নদীর সংস্কারের ফলে আবার আগের মতো তার প্রবাহ ফিরে আসবে। কিন্তু তা আর হল না। নদী দেখতে মালুমই হয় না যে সংস্কার হয়েছে। আবর্জনা, কচুরিপানার জঙ্গলে ফের ভরে গিয়েছে নদী। এত টাকা খরচ করে সংস্কারের কোনও শুফলও মিলল না।”
সরস্বতী নদী বাঁচাও কমিটির সম্পাদক বাপিঠাকুর চক্রবর্তী বলেন, সরস্বতী নদীর সংস্কারের দাবিতে আমরা প্রথম কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা করি। এর পর এই মামলায় জেতার পর সরস্বতী নদী সংস্কারের জন্য ৩২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা অনুমোদিত হয়। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
সেচ দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার স্বপন দত্ত বলেন, “সরস্বতী নদী সংস্কারের পর আর কোনও ডেভলেপমেন্ট হয়নি। আবার নদীতে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। তবে ফের ভাবনা-চিন্তা চলছে, যাতে নদীর স্বাভাবিক ফিরিয়ে আনা যায়। তবে ইতিমধ্যেই বর্ষা নেমে গিয়েছে। এলাকার নিকাশির অন্যতম প্রধান সহায়ক এই নদী। কিন্তু বর্তমানে নদীর অবস্থা দেখে দু’পারের মানুষ ফের জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন।