চুঁচুড়ায় ঘড়ির মোড়ে বামেদের বিক্ষোভ-সমাবেশ। ছবি: তাপস ঘোষ।
রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের লাগাতার সন্ত্রাস, প্রলোভন দেখিয়ে পঞ্চায়েত, পুরসভা দখলের চেষ্টা ইত্যাদির প্রতিবাদে এবং বিভিন্ন দুর্নীতি বন্ধে সুষ্ঠু সরকারি পদক্ষেপের দাবিতে চুঁচুড়ায় দু’দিন ধরে অবস্থান বিক্ষোভ করল বামেরা। চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টা টানা এই অবস্থান-বিক্ষোভ চলে। বাম জেলা নেতৃত্ব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের নেতৃবৃন্দ। বিক্ষোভ সমাবেশে সারদা নিয়েও তৃণমূলের সমালোচনা করা হয়।
বামফ্রন্টের অভিযোগ, রাজ্যে নারী নির্যাতন সীমা ছাড়িয়েছে। তৃণমূলের সন্ত্রাসে সমস্ত হুগলি জেলা জুড়ে বামফ্রন্টের ১১০০ কর্মী ঘরছাড়া। জিনিসের দাম যে ভাবে বেড়ে চলেছে জীবনধারণই অসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকেরা মজুরি পাচ্ছেন না। অবিলম্বে ১০০ দিনের মজুরির বকেয়া টাকা মেটানোর পাশাপাশি ঘরছাড়া দলীয় কর্মীদের ঘরে ফেরানোর জন্য দাবি জানানো হয়েছে সমাবেশে।
জেলায় শিল্পের দূরবস্থা নিয়েও সরব হয়েছেন বামেরা। জেলার বন্ধ কারখানাগুলির দরজা খোলার জন্য বিক্ষোভ-অবস্থান থেকে দাবি জানানো হয়েছে। বাম নেতৃত্বের বক্তব্য, এক কালে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকলেও সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা, হিন্দমোটর, কেশোরাম রেয়ন, স্পানপাইপ-এর মতো বর্তমানে প্রায় সবক’টি কারখানাই বন্ধ। বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি কারখানা তৈরির বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে শিল্পের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে সব চাষীরা নিজেদের সামান্য জমিটুকু দিয়ে বাড়ির ছেলেদের একটা কাজের আশা করেছিলেন, তাঁরা আজ অসহায়। জমিও গেল। কাজও হল না। তাই তাঁদের দাবি, সিঙ্গুরের ওই জায়গায় নতুন কোনও শিল্প গড়ে বেকারদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত বর্তমান সরকারে। আদালতের বাইরে এসে অসহায় চাষীদের পাশে দাঁড়ানোর দাবিও জানান তাঁরা। এ দিন বিক্ষোভ সমাবেশ থেকেই একই দাবিতে আগামী ১১ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা জুড়ে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত দফতর ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এ দিন সমাবেশে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তৃণমূলের কড়া সমালোচনা করেন সিপিএম নেতা ও সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, “সারদা নিয়ে সিবিআই তদন্ত আটকাতে মমতা ব্যানার্জির সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। যাতে সঠিক তদন্ত না হয়। এখন ঘুর পথে তদন্তের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা চালাচ্ছে।” এদিন তিনি অভিযোগ করেন, “মমতা ও মুকুলের নেতৃত্বে সারদা চিট ফান্ডের টাকায় বহু সম্পত্তি হয়েছে।” সিবিআই নিয়ে মমতাকে কটাক্ষ করে সেলিম বলেন, “আগে মমতা সব ব্যাপারে সিবিআই তদন্ত চাইতেন। আর এখন তিনি সিবিআইকে দূরে রাখছেন। কারণ তাঁর দলের নেতা মন্ত্রীরাই এই কাণ্ডে জড়িত।” বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রাজ্যে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখানে বিজেপি নেতারা তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন, আবার দিল্লিতে রাজনাথের সঙ্গে দেখা করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এর পরেই সিবিআইকে কেন্দ্রীয় সরকারের পোষা তোতা এবং সিআইডি-কে রাজ্য সরকারের পোয়া ময়না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হুগলির প্রাক্তন সাংসদ এবং সিপিএম নেতা রূপচাঁদ পাল বলেন, “বর্তমান তৃণমূল চালিত সরকারের ধারাবাহিক সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে আমাদের এই বিক্ষোভ অবস্থান। এর পরেও যদি আমাদের কর্মীদের উপর আঘাত আসে তাহলে শুধু জেলা নয়, রাজ্য জুড়ে আন্দোলন চলবে।”