সিপিএম জোনাল কমিটি তুলে দিচ্ছে হাওড়াতেও

মালদহের পরে এ বার একই পথে হাঁটছে হাওড়া জেলা সিপিএমও। সাংগঠনিক কাজে গতি আনতে হাওড়ায় তুলে দেওয়া হচ্ছে সব ক’টি জোনাল কমিটি। নানা লোকাল কমিটির সংযুক্তি ঘটিয়ে সেগুলিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। সরাসরি জেলা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তারা কাজ করবে বলে দল সূত্রে বলা হয়েছে।

Advertisement

নুরুল আবসার ও মনিরুল ইসলাম

হাওড়া শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৯
Share:

মালদহের পরে এ বার একই পথে হাঁটছে হাওড়া জেলা সিপিএমও।

Advertisement

সাংগঠনিক কাজে গতি আনতে হাওড়ায় তুলে দেওয়া হচ্ছে সব ক’টি জোনাল কমিটি। নানা লোকাল কমিটির সংযুক্তি ঘটিয়ে সেগুলিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। সরাসরি জেলা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তারা কাজ করবে বলে দল সূত্রে বলা হয়েছে।

কেন এই রদবদল?

Advertisement

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে দলের রাজ্য সম্মেলনেই বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু কমিটি ভেঙে দেওয়া বা সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সময়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে বহু নেতা-কর্মীই দলের কার্যালয়গুলিতে আসছিলেন না। বহু কার্যালয় বন্ধ বা ‘দখল’ও হয়ে যায়। সন্ত্রাসের অভিযোগের মাত্রা কমলেও কর্মী-সমর্থকের নিষ্ক্রিয়তার কথা রাজ্য স্তরের নেতারা মেনে নিয়েছেন। ফলে, সাংগঠনিক ভাবে দলের নানা কাজকর্ম দেখভালের জন্য দ্বিতীয় স্তরে থাকা জোনাল কমিটি কার্যকারিতা হারিয়েছে বহু জায়গায়। গত নভেম্বরের গোড়ায় মালদহ জেলা সিপিএম আলিমুদ্দিনে বৈঠকে জেলার জোনাল কমিটিগুলি তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অনুমোদন নিয়ে তার পরেই তারা ১৮টি জোনাল কমিটি তুলে দেয়। এ বার সেই পথেই হাঁটছে হাওড়া জেলা সিপিএমও।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “কার্যকারিতা না থাকলে কমিটি তুলে দেওয়ার ব্যাপারে দলে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোনাল কমিটি অবলুপ্ত করতে হলে রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে জেলা কমিটিকে।”

দলের হাওড়া জেলা কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে দলীয় নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা তৃণমূল স্তর পর্যন্ত জানাতে হবে দ্রুততার সঙ্গে। গ্রামে যদি কোনও ঘটনা ঘটে তার কথা জানতে গেলে যদি জোনাল স্তর পার হয়ে আসতে হলে অনেকটা সময় চলে যায়। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে দলের তৃণমূল স্তর পর্যন্ত দ্রুত সিদ্ধান্তের কথা জানাতে হবে। জোনাল স্তরের মাধ্যমে খবরাখবর আদানপ্রদান এবং তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটা জটিলতা ছাড়া কিছুই নয়।

দলের জেলা কমিটির এক নেতা বলেন, “দল চাইছে তৃণমূল স্তর থেকে প্রতিশ্রুতিমান নেতারা উঠে আসুন। সেই সব নেতাদের সঙ্গে সরাসরি জেলা কমিটি যোগাযোগ করতে পারবেন। তাঁদের প্রতি নজর রাখা হবে। এ ভাবেই তৈরি হবেন ভবিষ্যতের নেতারা। রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়েই জোনাল কমিটি তুলে দেওয়া হচ্ছে।” আর এক জন নেতার কথায়, “লোকাল কমিটির সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হবে। যেখানে দলের ক্ষমতা, প্রভাব ও সদস্য সংখ্যা বেশি সেখানে একাধিক লোকাল কমিটি থাকবে। আবার যেখানে দলের প্রভাব এবং সদস্য তুলনামূলক ভাবে কম সেখানে একটি লোকাল কমিটি থাকবে।” তবে, জেলা কমিটিরই নেতাদের একাংশের মতে, রাজ্যে পালাবদলের পরে দলের শক্তি কমেছে। ফলে, এই সিদ্ধান্ত ছাড়া উপায় ছিল না। দলের সাংগঠনিক এই দুর্বলতার কথা অবশ্য মানতে নারাজ জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার। তাঁর দাবি, “আমাদের দল ছেড়ে অনেকে যেমন চলে যাচ্ছেন আবার অনেক নতুন সদস্যও দলে আসছেন। দলের ক্ষমতার সঙ্গে জোনাল কমিটিগুলি তুলে দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।”

এখন হাওড়ায় সিপিএমের জোনাল কমিটির সংখ্যা ১৯টি। এত দিন তার অধীনে মোট ৯৭টি লোকাল কমিটি কাজ করছিল। জেলা সিপিএমের এক নেতা জানিয়েছেন, জোনাল কমিটিগুলি তুলে দেওয়ার পরে লোকাল কমিটির এলাকা বাড়ানো হবে। পরে একাধিক লোকাল কমিটি তুলে দিয়ে অন্য লোকাল কমিটির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে। রদবদলের পরে জেলায় এত দিন ধরে থাকা ৯৭টি লোকাল কমিটির সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৫০টিতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement