বৈধ কাগজপত্র (ক্রেডেনশিয়াল) ছাড়াই একটি গ্রামীণ পিচ রাস্তা নির্মাণের টেন্ডারে বিশেষ এক ঠিকাদারকে টেন্ডার ফর্ম দেওয়ার দাবিতে বিডিওকে হেনস্থার অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে। বুধবার ঘটনাটি ঘটে হুগলির গোঘাট-১ ব্লকে। এ দিন তিনজন টেন্ডার ফর্ম সংগ্রহ করেন। কাগজপত্র ঠিক না থাকায় ওই ঠিকাদারকে প্রথমে টেন্ডার ফর্ম দেওয়া হয়নি। অভিযোগ, পরে জোর খাটিয়ে ওই ঠিকাদারকে ফর্ম দিতে বাধ্য করেন গোঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। টেন্ডার খোলার নির্দিষ্ট দিন ছিল বৃহস্পতিবার। বিষয়টি বিডিও মহকুমাশাসককে জানালে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। তবে এ দিন টেন্ডার খোলার দিন থাকলেও বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। বিডিও জানান, ফের গোলমালের আশঙ্কাতেই এটা বন্ধ রাখা হয়। যদিও বিকেল সাড়ে ৫টার পর ফের পঞ্চায়েতে সমিতির সভাপতির চাপে টেন্ডার খোলার প্রক্রিয়া চালু হয়।
বিডিওকে হেনস্থা এবং অন্যায়ভাবে টেন্ডার ফর্ম দিতে বাধ্য করা নিয়ে দলীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “এমন কোনও ঘটনা আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগ প্রমাণ হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিডিও দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের অভিযোগ, “বুধবার অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ এবং মারমুখী হয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৃণাল আলু ওই ঠিকাদারটিকে ফর্ম দিতে এবং সেই ফর্মের উপর অনুমোদন (অ্যালাউ) করার বিষয়টি লিখতে বাধ্য করেন।” বিডিও জানান, বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানানো হলে তিনি শর্তাবলী না পূরণ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেন। মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, “সব ঘটনা শুনে বিডিওকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলি। তবে বৃহস্পতিবার ফের ওই সভাপতির চাপে ও গোলমালের আশঙ্কায় টেন্ডার ফর্ম খোলার কাজ হয়েছে বলে বিডিও জানিয়েছেন।”
অভিযুক্ত মৃণালবাবু বিডিওর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কথা স্বীকার করলেও তাঁর পাল্টা অভিযোগ, বিডিও নিজের দুর্নীতি ঢাকতে ‘ঠিকাদারকে ফর্ম দিতে বাধ্য করিয়েছি’ বলে দাবি করছেন। তাঁর সাফাই, “অজয় মণ্ডল নামে ওই ঠিকাদারকে প্রয়োজনীয় শংসাপত্রের (ক্রেডেনশিয়াল) ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন বিডিও। তার ডিসিআর কাটাও হয়ে গিয়েছিল। কেবল দেড় লক্ষ টাকা হাতে পাননি বলে তাঁকে ফর্ম দেওয়া হচ্ছিল না। আমি এর প্রতিবাদ করেছিলাম।”
সভাপতির অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে বিডিওর পাল্টা অভিযোগ, “বৃহস্পতিবারও মৃণালবাবু এসে চাপ দিয়ে টেন্ডার খোলান এবং ওই ঠিকাদারকে বরাত দিতে বাধ্য করান।” বিষয়টি তিনি মহকুমাশাসককেও জানিয়েছেন বলে বিডিও জানান।
মহকুমাশাসক বলেন, “ঘটনা শোনার পর আমি বিডিও ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ ইসু করতে নিষেধ করেছি। পরে সব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রের খবর, স্থানীয় ভাবাদিঘি গ্রামে ১২০০ মিটার একটি পিচের রাস্তার জন্য সাংসদ তহবিল থেকে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই রাস্তা নির্মাণের টেন্ডার সংক্রান্ত নোটিস দেওয়া হয়। ফর্ম তোলা ও জমা দেওয়ার দিন ছিল বুধবার। ওই দিন টেন্ডার সংক্রান্ত শর্তগুলির যথাযথ শংসাপত্র দাখিল করলে তিনজনকে ফর্ম দেওয়া হয়। কিন্তু অজয়বাবু ওই টাকায় রাস্তা নির্মাণে নিজের যোগ্যতা সংক্রান্ত শংসাপত্র দিতে পারেননি। ফলে তাঁকে ফর্ম দেওয়া হয়নি। ফর্ম না পেয়ে হতাশ অজয়বাবু বিষয়টি মৃণালবাবুকে জানান। অভিযোগ, এর পরেই মৃণালবাবু বিডিওর ঘরে ঢুকে তাঁকে হেনস্থা করেন ও ফর্ম দিতে বাধ্য করান।