উদয়নারায়ণপুরে চলছে কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরির কাজ। ছবি: সুব্রত জানা।
ডিভিসি-র ছাড়া জলে গত বছর বর্ষার মরসুমে দামোদর উপচে প্লাবিত হয়েছিল উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লক। এই বর্ষায় নদীবাঁধ মেরামতির কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় বন্যার আশঙ্কা রয়েই গেল বলে মনে করছেন দুই ব্লকের বহু গ্রামবাসী।
দু’টি ব্লকই বন্যাপ্রবণ। গত বছর বর্ষার পরেই দুই ব্লকে দামোদরের নদীবাঁধ সংস্কারে হাত দেয় সেচ দফতর। সেচ দফতর দাবি করেছে, দুই ব্লকের নদীবাঁধের যে সব জায়গা বেশি ভাঙনপ্রবণ, সেই সব জায়গায় বাঁধ যে ভাবে সংস্কার করা হচ্ছে, তাতে ফের ভাঙার সম্ভাবনা প্রায় নেই। তবে, ডিভিসি যদি ১ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেকের বেশি জল ছাড়ে, তা হলে বাঁধ উপচে জল লোকালয়ে ঢুকতে পারে। এ জন্য বাঁধ সংলগ্ন কিছু নিকাশি-নালাও সংস্কারের কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মানুষের স্বার্থে যতটা সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করছি। তবে, দামোদরের ভাঙন প্রতিরোধে সরকার বৃহত্তর পরিকল্পনা নিয়েছে। কী ভাবে সেটার দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়, তা দেখছি।”
ডিভিসি-র নিয়মমতো ওই দুই ব্লকই পড়ছে ‘স্পিল জোন’-এ। অর্থাৎ, দামোদরের পাড়ে ওই দুই ব্লকে স্থায়ী নদীবাঁধ তৈরি করা যাবে না। গত বছর ডিভিসি-র ছাড়া জলে উদয়নারায়ণপুরে ৩৭ হেক্টর জমির ধান, ৫০ হেক্টর জমির আখ এবং ১৫০ হেক্টর জমির পাট চাষ নষ্ট হয়। ভেঙে পড়ে দেড়শোটি কাঁচা বাড়ি। আমতা-২ ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনোলা-কৃষ্ণবাটি, খালিয়া, কুশবেড়িয়া এবং তাজপুর পঞ্চায়েত এলাকা।
বন্যার জল নেমে যাওয়ার পরে শুরু হয় দামোদরের নদীবাঁধ মেরামতির কাজ। ইতিমধ্যে উদয়নারায়ণপুরের ডিহিভুরসুট জিরো পয়েন্ট, ঘোলা, হরিহরপুর, হোদল, কুর্চি, টোকাপুর, শিবানীপুর, জয়নগর ইত্যাদি ভাঙনপ্রবণ এলাকায় নদীবাঁধ সংস্কারের কাজ হয়েছে। কোথাও মাটির বস্তা ফেলে বাঁধ উঁচু করা হয়েছে। কোথাও বোল্ডার ফেলা হয়েছে। কোথাও কংক্রিটের ব্লক দিয়ে বাঁধানো (পিচিং) হয়েছে নদীবাঁধ। যেমন, ডিহিভুটসুট জিরো পয়েন্টের কাছ থেকে নদীর দিকে আড়াইশো মিটার লম্বা এবং ১৮ মিটার চওড়া এলাকা জুড়ে কংক্রিটের ব্লক বসানো হয়েছে। এ ভাবে বাঁধ সংস্কার হয়েছে জয়নগর এবং শিবানীপুর এলাকাতেও। কয়েকটি জায়গায় নদীবাঁধের উপরে দু’ফুট করে মাটি ফেলা হয়েছে এবং তার দু’ধারে ইটের গাঁথনি দেওয়ার কাজ চলছে। যাতে জল পাঁচিলে বাধা পেয়ে লোকালয়ে না পারে। আকনা, মনসুখা, অধিকারীপাড়া, সাঁতরাপাড়ার মতো কয়েকটি এলাকায় চলছে নিকাশি খাল সংস্কারের কাজ। একই ভাবে নদীবাঁধ এবং নিকাশি-নালা সংস্কার চলছে আমতা-২ ব্লকের রানাপাড়া, সোমেশ্বর, মল্লিকচক-সহ কয়েকটি এলাকায়।
সেচ দফতরের হিসাবে, উদয়নারায়ণপুর ব্লকে মোট ১৪ কিলোমিটার নদীবাঁধের মধ্যে এ বার সংস্কার করা হচ্ছে আড়াই কিলোমিটার। আমতা-২ ব্লকের ১৬ কিলোমিটার নদীবাঁধের মধ্যে সংস্কারের কাজ চলছে মাত্র তিন কিলোমিটারে।
গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, অস্থায়ী ভাবে নদীবাঁধ মেরামতি করে লাভ হয় না। বহু সময়েই বাঁধ ছাপিয়ে জল লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তাঁদের ঘরদোর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে যেতে হয়। শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা বারেবারে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিলেও এখনও কাজের কাজ কিছু হল না। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে বা ডিভিসি বেশি জল ছাড়লে ফের প্লাবিত হবে গ্রাম।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উদয়নারায়ণপুরের টোকাপুরের এক চাষি জানান, বন্যার ভয়ে তিনি এ বার ধান চাষ করতে পরেননি। কারণ, খেতে জল ঢুকলে সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে। ওই এলাকারই মোহনলাল চন্দ্র নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা চাই বন্যা নিয়ন্ত্রণে সরকার স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নিক।” আমতার রানাপাড়ার এক বাসিন্দার ক্ষোভ, “নদীবাঁধ সংস্কারের কাজ হচ্ছে খুবই কম জায়গায়। অন্য জায়গাগুলি তো দুর্বলই থেকে যাচ্ছে। সেই সব জায়গার বাঁধ ভেঙেও গ্রামে জল ঢুকতে পারে।”