নষ্ট হচ্ছে দুমূর্ল্য বইপত্র

বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজ্যের দ্বিতীয় গ্রন্থাগার নিয়ে উদাসীন প্রশাসন

বন্ধ হতে বসেছে দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো হুগলি পাবলিক লাইব্রেরি। সাধারণ মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস আরও বাড়িয়ে তুলতে এক সময় জেলা সদর চুঁচুড়ায় গড়ে তোলা হয়েছিল এই গ্রন্থাগার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থা এবং আর্থিক সমস্যার কারণে বর্তমানে গ্রন্থাগারটির অবস্থা শোচনীয়। এখানকার বহু অমূল্য এবং দুষ্প্রাপ্য বই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০১
Share:

অযত্নে এভাবেই নষ্ট হচ্ছে বই।—নিজস্ব চিত্র।

বন্ধ হতে বসেছে দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো হুগলি পাবলিক লাইব্রেরি।

Advertisement

সাধারণ মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস আরও বাড়িয়ে তুলতে এক সময় জেলা সদর চুঁচুড়ায় গড়ে তোলা হয়েছিল এই গ্রন্থাগার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থা এবং আর্থিক সমস্যার কারণে বর্তমানে গ্রন্থাগারটির অবস্থা শোচনীয়। এখানকার বহু অমূল্য এবং দুষ্প্রাপ্য বই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে এখনই প্রশাসনের তরফে হস্তক্ষেপ না করলে গ্রন্থাগারটি এবং বলাবহুল্য সেখানকার বইপত্র বাঁচানো যাবে না।

জেলায় সবর্র্-সাধারণের জন্য প্রথম তথা রাজ্যের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠিত এই গ্রন্থাগার। চুঁচুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘড়ির মোড়ের অদূরে জেলাপরিষদের কার্যালয়ের পিছনে হুগলি বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনের একাংশে রয়েছে এই গ্রন্থাগার। কিন্তু অযত্নে, অবহেলায় তার অস্তিত্বই এখন বিপন্ন। চুঁচুড়ার ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “১৮৫৪ সালে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার তৎকালীন প্রধান ঈশানচন্দ্র মিত্রর উদ্যোগে এই গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর তিন বছর আগে রাজনারায়ণ বসুর উদ্যোগে মেদিনীপুরে রাজ্যের মধ্যে প্রথম জনসাধারণের জন্য গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।” সেই সময়ের একটি প্রবন্ধ থেকে জানা গিয়েছে, চুঁচুড়ার এই গ্রন্থাগারে এক সময় সদস্য সংখ্যা ছিল ৬১ জন। বইয়ের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪২৮টি। সেই সময় সরকারি অনুদান পাওয়া যেত ১২০ টাকা এবং গ্রন্থাগারের বার্ষিক আয় ছিল ৭৫০ টাকা। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে কোনও গ্রন্থাগারে প্রায় সাড়ে চার হাজার বইয়ের সংখ্যা ভাবাই যেত না। কিন্তু শুধুমাত্র সাদারণ মানুষের মধ্যে পঠন-পাঠন প্রসারের আশায় তা সম্ভব করে তুলেছিলেন গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে চারের দশকের শুরুতে চুঁচুড়ার এই গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়। সেই সময় জেলার এই গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ছিল দাঁড়ায় পাঁচ হাজারেরও বেশি। স্বাধীনতার সাত বছর পরে ১৯৫৪ সালে গ্রন্থাগারের বয়স ১০০ বছর অতিক্রম করে। দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রন্থাগারের সদস্য এক প্রবীণ জানালেন, ১৯৬০ সালে হুগলি জেলার নিরিখে একটি উল্লেখয্যেগ্য ঘটনা ঘটে। এতদিন জেলায় কোনও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ছিল না। সেই বছর চুঁচুড়ার মল্লিক কাশেম হাট সংলগ্ন এলাকায় জেলা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্ভবত তার পর থেকেই এই সাদারণ গ্রন্থাগারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। বর্তমানে গ্রন্থাগারে বহু দুমূর্ল্য বইপত্র রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সব নষ্ট হচ্ছে।

চুঁচুড়ার বিশিষ্ট আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “বই কিছু নষ্ট হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনও গল্প, উপন্যাস, নাটক, ভ্রমণ এবং ধর্ম সংক্রান্ত প্রচুর বইপত্র অবিকৃত রয়েছে। রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর একটু দায়িত্বশীল হলে কিন্তু ওইসব বই এখনও বাঁচানো সম্ভব হবে।” প্রসঙ্গত, বার অ্যাসোশিয়েসনেরও বহু আইনজীবীও প্রাচীন এই গ্রন্থাগারটির সংস্কারে আগ্রহী। প্রবীণ শিক্ষক সনৎ রায়চৌধুরী বলেন, “পাঠককূলের স্বার্থেই ইতিহাস সমৃদ্ধ ওই গ্রন্থাগার বাঁচাতে অবিলম্বে প্রশাসনিক পদক্ষেপ দরকার।” হুগলি-চুঁচুড়ার বর্তমান পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “গ্রন্ধাগারটির পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমি নিজে গিয়ে সমস্ত খতিয়ে দেখেছি। প্রাচীন এই গ্রন্থাগার বাঁচাতে বিকল্প কোনও জায়গায় সেটি চালু করা যায় কি না সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।”

জেলা গ্রন্থাগার কৃত্যক অমিত রায় বলেন, “প্রাচীন এই লাইব্রেরিটি বাঁচানো এখনও সম্ভব। এ জন্য সরকারি অর্থও বরাদ্দ রয়েছে। শুধু গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। আমরাও সরকারি স্তরে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement