এক বিচারকের ব্যবহার নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে বুধবার বিকেল থেকে তাঁর এজলাস বয়কট শুরু করেছেন শ্রীরামপুর আদালতের আইনজীবীরা। ফলে, মন্দাক্রান্তা সাহা নামে ওই দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন)-এর এজলাসে বৃহস্পতিবারও কোনও শুনানি হয়নি। অনেক বিচারপ্রার্থীই ফিরে যেতে বাধ্য হন।
দেওয়ানি ও ফৌজদারি দুই আইনজীবী সংগঠনের তরফেই যৌথ ভাবে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাস কয়েক আগে দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন) পদে যোগ দেন মন্দাক্রান্তাদেবী। তার আগে তিনি কিছু দিন এই আদালতেই অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পদে ছিলেন। বয়কটকারীদের পক্ষে বার লাইব্রেরির সম্পাদক রামচন্দ্র ঘোষের অভিযোগ, ‘‘বিচারক চেয়ারে বসে দুর্ব্যবহার করেন। অশোভন আচরণ করেন। মামলা না শুনে আইনজীবীদের বসিয়ে রাখেন। তাঁর নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিরও অভাব রয়েছে। তাই মান-সম্মান রক্ষার্থে ওই এজলাসে আমরা ঢুকছি না। ওঁর আচরণ দ্রুত পরিবর্তন হোক।” দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক আইনজীবীও বলেন, “উনি আমার এবং অন্য সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেছেন। ওঁর বদলি দাবি করছি।”
আইনজীবীদের একাংশের অবশ্য দাবি, আগেও এই আদালতে বিচারকের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই আইনজীবী, ল’ক্লার্কদের সংগঠন এবং এই পেশার সঙ্গে যুক্ত সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বার বয়কটের সিদ্ধান্ত মুষ্টিমেয় কয়েক জন মিলে নিয়েছেন। আইনজীবী চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এক আইনজীবী বলেন, “ওই কোর্টে প্রচুর মামলা। স্বভাবতই সময় লাগে। কিছু আইনজীবীর সেটা পছন্দ নয়।” একাধিক আইনজীবীর দাবি, তাঁরা এ দিন ওই এজলাসে ঢুকতে যান। তাঁদের ঢুকতে বারণ করা হয়। রামচন্দ্রবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট প্রস্তাবনা করা হয়েছে। কেউ যদি উল্টো বলেন তবে তিনি এই আদালতে প্র্যাকটিসই করেন না।
বুধবার থেকে বয়কট হল কেন?
আইনজীবীদের একটি সূত্রের বক্তব্য, ওই দুপুরে মন্দাক্রান্তাদেবীর এজলাসে জমি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি হচ্ছিল। তার মধ্যেই রামচন্দ্রবাবু তাঁর একটি মামলা শুনতে হবে বলে বিচারকের কাছে দাবি জানান। বিচারক তাঁকে জানান, একটি মামলা চলছে। আর দু’-একটি শুনানি পর পর আছে। সেগুলির পরে রামবাবুর মামলার শুনানি হবে। কিন্তু রামবাবু বিষয়টি মানতে পারেননি। বিচারক ইচ্ছাকৃত ভাবে মামলা শুনছেন না এবং তাঁকে হয়রান করছেন, এই অভিযোগ তুলে ভরা এজলাসেই চেঁচামেচি জুড়ে দেন। তার পরে তিনি এবং সহকর্মী অন্য আইনজীবীদের নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। যে মামলার শুনানি চলছিল, মাঝপথেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। রামচন্দ্রবাবু বলেন, “উনি আমাকে অকারণেই বসিয়ে রেখেছিলেন। অত্যন্ত অপমানিত বোধ করি। টানা দুর্বব্যহার দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বিচারপ্রার্থীরা চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা মিটে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হোক ওই এজলাসে।