অনাস্থায় জিতে হুগলির আরও একটি পঞ্চায়েতের দখল নিল তৃণমূল। গত কয়েক মাসে সিঙ্গুর, পাণ্ডুয়া-সহ জেলার কয়েকটি ব্লকে বামেদের দখলে থাকা বেশ কিছু পঞ্চায়েত হাতবদল হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই বিরোধীদের হাত থেকে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। তাদের মধ্যে নবতম সংযোজন চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের চন্দ্রহাটি ১ নম্বর পঞ্চায়েত।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভাবে ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে সিপিএম। ১৫টির মধ্যে ১০টি আসনই তারা দখল করে। বাকি ৫টি আসনে তৃণমূল জিতেছিল। প্রধান হন সিপিএমের অপর্ণা তালুকদার। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, ইদানিং কিছু সদস্যের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হয়। প্রধান উন্নয়নের কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ তোলেন তৃণমূল সদস্যরা। এ ব্যাপারে সিপিএমের কয়েক জনেরও সমর্থন পান তাঁরা। সম্প্রতি তৃণমূলের তরফে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়। প্রধানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছ্বাচারিতা এবং দুর্ব্যবহারেরও অভিযোগ করা হয় তাতে। অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বুধবার ভোটাভুটি ছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, তৃণমূলের পাশাপাশি ৫ জন সিপিএম সদস্যও অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন। অপর্নাদেবী-সহ বাকী পাঁচ জন উপস্থিত থাকলেও ভোটাভুটিতে অংশ নেননি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্য শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত বলেন, “সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই ওই দলের পাঁচ জন আমাদের সঙ্গে সামিল হয়েছেন। তৃণমূলের নেতৃত্বে এ বার সেখানে উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত হবে।” তপনবাবু জানান, অনাস্থার পক্ষে ভোট দেওয়া সিপিএম সদস্য দেবিকা চক্রবর্তী নতুন প্রধান হয়েছেন।
সিপিএম শিবিরের অবশ্য দাবি, ভোটে জিততে না পেরে সিপিএমের দখলে থাকা একের পর এক পঞ্চায়েত ঘুরপথে হাতানোর পরিকল্পনা করে শাসক দল তৃণমূল। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মানেননি অপর্ণাদেবী। তিনি জানান, অনাস্থার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেই কারণেই তিনি-সহ দলের ৫ সদস্য ভোটাভুটিতে অংশ নেননি। তাঁর কথায়, “কাজ করেছি কি না, এলাকায় ঘুরে আর মানুষের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যাবে। অনাস্থার পিছনে কিছু কারণ দেখাতে হয় বলেই মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ করে দেখাক, তা হলে তো বুঝব।” তাঁর কটাক্ষ, “লোভের বশবর্তী হয়ে সিপিএমের টিকিটে জেতা কয়েকজন তৃণমূলে ভিড়েছেন। মানুষ কিন্তু বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না।”
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের খবর, দলের অবস্থা খুব একটা ভাল না হলেও ওই এলাকায় সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট। সেই কোন্দল কাজে লাগিয়েই তৃণমূল নেতৃত্ব সিপিএম সদস্যদের টেনে আনতে সমর্থ হন। দেবিকাদেবীর দাবি, “প্রধানের জন্য উন্নয়নের কাজ ভীষণ ভাবে ব্যহত হচ্ছিল। দলকেও জানিয়েছিলাম। তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তৃণমূল কিন্তু পাশে ছিল। তাই, অনাস্থার পক্ষে সই করা ছাড়া অন্য রাস্তা খোলা ছিল না। এতে লোভের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে!”