জগাছা-কাণ্ডের জের

পুল-পার্টিতে শর্ত আরোপের ভাবনা পুলিশের

জগাছার ক্লাবে সুইমিং পুলে সম্প্রতি এক যুবতীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। তার জেরে হাওড়া জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বড় ক্লাব ও রিসর্টে পুল-পার্টি আয়োজনে এ বার কড়া নজরদারি চালানোর কথা বিবেচনা করছে জেলা পুলিশ। নিরাপত্তার খাতিরে পুল-পার্টিতে কিছু শর্ত আরোপ করার কথাও ভাবছে তারা।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০২:০২
Share:

বীরশিবপুর ও পাঁচলার দু’টি ক্লাব। এ বার থেকে বাড়তি নজরদারিতে। ছবি: সুব্রত জানা।

জগাছার ক্লাবে সুইমিং পুলে সম্প্রতি এক যুবতীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। তার জেরে হাওড়া জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বড় ক্লাব ও রিসর্টে পুল-পার্টি আয়োজনে এ বার কড়া নজরদারি চালানোর কথা বিবেচনা করছে জেলা পুলিশ। নিরাপত্তার খাতিরে পুল-পার্টিতে কিছু শর্ত আরোপ করার কথাও ভাবছে তারা। তবে, আগে এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় জেলা পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে পুল-পার্টিতে যোগ দিতে এসে কে কখন পুলে নামছেন বা কী ভাবে নামছেন, সে ব্যাপারে নজরদারি চালাতে হবে বাউন্সারদের। প্রয়োজনে কোনও বাউন্সার যদি মনে করেন কেউ বেসামাল অবস্থায় পুলে নামছেন তাঁকে নিষেধ করতে হবে। পার্টির মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলের জল পাম্প করে নামিয়ে দিতে হবে। যাতে জলে ডুবে কারও বিপদ না হয়।

হাওড়া জেলায় দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। মুম্বই রোড এবং সংলগ্ন এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যে অন্তত ১০টি ক্লাব ও রিসর্ট হয়েছে, যেখানে সুইমিং পুল রয়েছে। ওই সব ক্লাব-রিসর্টে প্রায়ই পুল-পার্টির আয়োজন হয়। সম্প্রতি জগাছার ক্লাবটিতে পুল-পার্টি চলাকালীন শুভাঞ্জিতা বসাক নামে বছর পঁচিশের এক যুবতীর দেহ মেলে পুল থেকে। পুলিশের অনুমান, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কোনও ভাবে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরেই ওই সব পার্টিতে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় জেলা পুলিশের অন্দরে।

Advertisement

তবে, নিরাপত্তার খাতিরে ক্লাব বা পুল-পার্টির উদ্যোক্তাদের জন্য শর্ত আরোপের আগে কিছুটা সতর্ক ভাবে এগোতে চাইছে পুলিশ। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “শর্ত আরোপের সময় ক্লাবগুলির ব্যবসায়ীর স্বার্থের দিকটিও দেখতে হবে। পুল-পার্টিতে বহু অভিজাত মানুষ সামিল হন। আনন্দ করতে এসে তাঁরা নজরদারির খপ্পরে পড়ছেন, এমনটি যাতে তাঁদের মনে না হয়, সেটাও দেখতে হবে। রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

কী ভাবে নজরদারি

• পুল-পার্টিতে যোগ দিতে এসে কে কখন পুলে নামছেন বা কী ভাবে নামছেন, নজর রাখবেন বাউন্সাররা।

• কাউকে বেসামাল অবস্থায় পুলে নামতে দেখলে তাঁকে নিষেধ করতে হবে।

• পার্টির মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলের জল পাম্প করে কমিয়ে দিতে হবে। যাতে ডুবে কারও বিপদ না হয়।

এ নিয়ে কী ভাবছেন বিভিন্ন ক্লাবের কর্তারা?

জগাছার ক্লাবটির পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, এ বার থেকে পুল-পার্টি আয়োজনের আগে উদ্যোক্তাদের আরও সতর্ক হতে বলা হবে। পুলিশকেও সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত। পাঁচলার বঘুদেবপুরেও রয়েছে এই রকম একটি ক্লাব। এখানে সপ্তাহান্তিক ছুটি কাটানোর জন্য রয়েছে বিলাসবহুল বাংলোও। এখানেও পুল-পার্টির আয়োজন হয়। এই ক্লাবটির কর্তাদের দাবি, পুল-পার্টি চলাকালীন অনেক সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। সুইমিং কস্টিউম ছাড়া কাউকে পার্টিতে যোগ দিতে দেওয়া হয় না। পার্টি চলাকালীন মদ্যপান নিষিদ্ধ। থাকে নিরাপত্তারক্ষীদের নজরদারিও। তবে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আর কী করণীয়, সে বিষয়ে পুলিশ এখনও কোনও যোগাযোগ করেনি বলে তাঁরা জানান।

উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরে একটি আধুনিক রিসর্টেও সুইমিং পুল তৈরি হচ্ছে। শীঘ্রই তা খুলে দেওয়া হবে বলে রিসর্ট-কর্তারা জানান। এখানেও পুল-পার্টির ব্যবস্থা থাকবে। তবে, জগাছা-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার বিষয়টিতে অবশ্যই জোর দেওয়া হবে বলে রিসর্ট-কর্তারা জানিয়েছেন।

এমনিতে পুল-পার্টি আয়োজন করতে হলে উদ্যোক্তাদের পুলিশের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলির প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা কেবল পুলটি ভাড়া দেন এবং খাবার-দাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা করেন। কারা আমন্ত্রিত হবেন, কত করে চাঁদা পড়বে, সে সব ঠিক করেন পার্টির উদ্যোক্তারা। তাঁরাই বাউন্সার আনেন। তার সঙ্গে ক্লাবের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীও থাকেন।

জগাছা-কাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, পুল-পার্টিতে মদ্যপান করে অনেকেই জলে নেমে যান। পুলের গভীরতা সাধারণত গড়ে চার ফুট হয়। কিন্তু নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কারও কারও ক্ষেত্রে জলের সেই গভীরতাও বড় বিপদ ডেকে আনে। পার্টি শুরু হওয়ার মিনিট চল্লিশ পর থেকেই পুলে নামার প্রবণতা বাড়ে। সেই সময় অনেকেই মদ্যপান করে বেসামাল হয়ে পড়েন। পার্টিতে যে সব বাউন্সার থাকেন, তাঁরা সাধারণত গোলমাল বা হট্টগোল থামানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। মদ্যপান করে কেউ পুলে নেমে পড়ছেন কিনা, সে দিকে সাধারণত নজর দেন না।

আর তাই নতুন শর্ত আরোপের ভাবনা পুলিশের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement