প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দলীয় সদস্যদেরই

দলীয় পঞ্চায়েত সদস্যরা প্রশাসনের কাছে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছেন দলেরই মহিলা প্রধানের বিরুদ্ধে। প্রধানও ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। আর দু’পক্ষের এমন চাপানউতোরে লাটে উঠেছে পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজ। গত তিন মাসে একটিও সাধারণ সভা করা যায়নি ওই সদস্যদের বাধায়। ফলে পরিষেবা পাচ্ছেন না হুগলির চণ্ডীতলা-২ ব্লকের সিপিএম পরিচালিত জনাই পঞ্চায়েতের মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জনাই শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৮
Share:

দলীয় পঞ্চায়েত সদস্যরা প্রশাসনের কাছে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছেন দলেরই মহিলা প্রধানের বিরুদ্ধে। প্রধানও ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। আর দু’পক্ষের এমন চাপানউতোরে লাটে উঠেছে পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজ। গত তিন মাসে একটিও সাধারণ সভা করা যায়নি ওই সদস্যদের বাধায়। ফলে পরিষেবা পাচ্ছেন না হুগলির চণ্ডীতলা-২ ব্লকের সিপিএম পরিচালিত জনাই পঞ্চায়েতের মানুষ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের লোকজনের নিজেদের মধ্যে গোলমালের জেরে তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ বিষয়ে বিডিও সিদ্ধার্থ গুঁই বলেন, “এখনও বিষয়টি তদন্তের পর্যায়ে আছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় আসেনি।” যদিও পরিষেবা নিয়ে গ্রামবাসীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

Advertisement

পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ১২। এর মধ্যে সিপিএমের দখলে রয়েছে ৭টি আসন। ৫টি তৃণমূলের দখলে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সিপিএম বোর্ড গঠন করে। প্রধান হন ওই দলের হাবিবা বেগম। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, বোর্ড গঠনের কিছু দিন পর থেকেই প্রধানের সঙ্গে দলের কিছু সদস্যের বনিবনা হচ্ছিল না। মাস কয়েক আগে বিরোধ চরমে ওঠে। গত জুন মাসে উপপ্রধান প্রভাত চট্টোপাধ্যায়-সহ ৪ সিপিএম সদস্য বিডিও সিদ্ধার্থ গুঁইয়ের কাছে প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ জানান। তাঁদের অভিযোগ, বাড়ি তৈরিতে অনুমতি দেওয়া থেকে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল নানা ক্ষেত্রে প্রধান অনিয়ম করেছেন। পঞ্চায়েতের কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রেওকারও সঙ্গে আলোচনা না করে তিনি একতরফা সিদ্ধান্ত নেন।

গত ১৩ জুন ৬ জন দলীয় সদস্য এবং পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা অপূর্ব পালের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে বিডিওর কাছে অভিযোগ জানান প্রধান। তাঁর বক্তব্য, তিনি রাজনীতিতে নতুন। তাঁর অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে দলের অন্য সদস্যরা নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে তাঁকে দিয়ে বিভিন্ন কাগজে সই করিয়ে নিতেন। পরে বুঝতে পেরে তিনি যে কোনও কাগজে সই করা বন্ধ করে দেন। হাবিবার অভিযোগ, এর পরই তাঁকে প্রধানের পদ থেকে ইস্তফার জন্য চাপ দিতে থাকেন ওই সদস্যরা। রাজি না হওয়ায় তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। দু’পক্ষের অভিযোগেরই তদন্ত হচ্ছে বলে বিডিও জানিয়েছেন। পাশাপাশি হুমকির বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে প্রধানের অভিযোগের প্রতিলিপি চণ্ডীতলা থানায় পাঠিয়ে দিয়েছেন বিডিও। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজকর্ম কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, পঞ্চায়েতে এসে তাঁরা কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না। ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে বর্ষায় নিকাশির ব্যবস্থা, রাস্তা তৈরি, কল মেরামত কোনও কাজই হচ্ছে না।

Advertisement

গত ২৭ অগস্ট পঞ্চায়েতে সাধারণ সভা হওয়ার কথা ছিল। প্রধানের অভিযোগ, সিপিএমের অন্য সদস্যদের বাধায় সভার কাজ পরিচালনা করা যায়নি। একই ভাবে আগেরও তিনটি সাধারণ সভা ভেস্তে যায় বলে তাঁর অভিযোগ। এ ব্যাপারে সবিস্তারে জানিয়ে তিনি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, “অভিযোগ না তুললে ওই সদস্যরা সভা করতে দেবে না বলছে।” পঞ্চায়েতের এক সিপিএম সদস্য রজতাভ রায়ের বক্তব্য, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন প্রধান। অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ তিনি দিতে পারছেন না। অভিযোগ প্রত্যাহারও করছেন না। এ হেন মিথ্যা অভিযোগ তো তিনি ভবিষ্যতে ফের আনতে পারেন। তাই আমরা সতর্ক থাকতে চাইছি।” সিপিএম সদস্যদের আরও অভিযোগ, সাধারণ সভা না হলেও প্রধান নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে বাড়ি তৈরি-সহ নানা কাজের অনুমতি দিচ্ছেন একক সিদ্ধান্তে। রজতাভবাবুর অভিযোগ, “অন্য দলের মদতেই প্রধান এ সব করছেন। দলীয় ভাবে আমরা তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। প্রশাসনকে জানিয়েও দিয়েছি।” স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূলের অঙ্গুলিহেলনেই পঞ্চায়েত প্রধান যাবতীয় কাজ করছেন। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অবশ্য বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ চেয়ে ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে গ্রামবাসীরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দিকেই তাকিয়ে গ্রামবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement