ইন্দিরা আবাসের টাকা পড়ে

প্রকল্প-কাজে গতি আনতে চায় প্রশাসন

গরিব উপভোক্তাদের কেউ চাইছেন ধীরে চলতে। কেউ বা প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে খরচ করে ফেলছেন। ফলে, হুগলি জেলায় ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে গতি নেই। গত অর্থবর্ষে অনুমোদিত ওই প্রকল্পের তৃতীয় কিস্তির টাকার বেশির ভাগটাই এখনও পড়ে রয়েছে জেলা প্রশাসনের ঘরে। ফলে, প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রকল্পে গতি আনতে বিডিওদের যথাযথ তদারকি এবং প্রয়োজনীয় বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৩
Share:

গরিব উপভোক্তাদের কেউ চাইছেন ধীরে চলতে। কেউ বা প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে খরচ করে ফেলছেন। ফলে, হুগলি জেলায় ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে গতি নেই। গত অর্থবর্ষে অনুমোদিত ওই প্রকল্পের তৃতীয় কিস্তির টাকার বেশির ভাগটাই এখনও পড়ে রয়েছে জেলা প্রশাসনের ঘরে। ফলে, প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রকল্পে গতি আনতে বিডিওদের যথাযথ তদারকি এবং প্রয়োজনীয় বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুমন ঘোষ বলেন, “আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই প্রকল্পে সব বাড়ি নির্মাণ যাতে সম্পূণর্র্ হয়, বিডিওদের সেই মতো পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। বিডিওরা কাজ শুরু করেছেন।” জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে ওই প্রকল্পে অনুমোদিত ১১,২১৬ (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২,৮৭৬টি) বাড়ির মধ্যে মাত্র ৫১৬০টি বাড়ির উপভোক্তা তৃতীয় কিস্তির টাকা দাবি করে পেয়েছেন। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে মাত্র ৩২৮৭টি। বাকি উপভোক্তারা তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার শর্তই পূরণ করতে পারেননি। চলতি আর্থিক বছরেও ওই প্রকল্পে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ি তৈরির কোটা (২৫,৩৮৩টি) মিলেছে। তারমধ্যে প্রায় ২২ হাজার উপভোক্তার প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা নিয়েছেন ৪৮০ জন উপভোক্তা। এ ক্ষেত্রেও তৃতীয় কিস্তির টাকা নিয়ে উপভোক্তারা যাতে বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করেন সে ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে।

বিপিএল তালিকাভুক্ত বা সহায় সম্বলহীন পরিবারের নতুন ঘর তৈরির জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশে কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৯৬ সাল নাগাদ। শুরুতে উপভোক্তাপিছু ৪৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হত দু’টি কিস্তিতে। বর্তমানে টাকার অঙ্ক বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার। তা দেওয়া হয় মোট তিনটি কিস্তিতে। প্রথম কিস্তিতে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪২ হাজার টাকা এবং তৃতীয় কিস্তিতে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। উপভোক্তার নাম অনুমোদন হলেই প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়ার আগে দেখার কথা লিন্টন (দরজার উপর পর্যন্ত গাঁথনি) অব্দি কাজ হয়েছে কিনা। তৃতীয় তথা শেষ কিস্তির টাকা দেওয়া হয় ছাদ ঢালাই হওয়ার পরে। প্রশাসন সেই ছবি তুলে তার পরে টাকা অনুমোদন করে। অর্থাৎ, বাড়ির কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হতে হবে। এই তৃতীয় শর্তই বেশির ভাগ উপভোক্তা পূরণ করতে পারছেন না বলে অভিমত ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম দু’টি কিস্তির টাকা গরিব মানুষেরা হাতে পেলেই নানা খাতে খরচ করে ফেলছেন। ফলে, বাড়ি তৈরির কাজটি গুরুত্ব হারাচ্ছে। ওই সব গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যে হেতু সরাসরি প্রকল্পের টাকা চলে যাচ্ছে, তাই প্রশাসনেরও কিছু করার থাকছে না। এ জন্যই উপভোক্তাদের বোঝানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিশেষ ভাবে ‘আবাস দিবস’ পালন করাও হচ্ছে।

Advertisement

উপভোক্তাদের মধ্যে আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের এক প্রৌঢ় এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় কিস্তির টাকা নিয়েছেন। বাড়ি তৈরির কাজ তাঁর অসম্পূর্ণ। তাঁর কথায়, “আমি দিন আনি দিন খাই। যখন টাকা পাই, তখন ধার মেটাতেই চলে যায়। বাড়ির জন্য টাকা রাখতে পারি না।” আর এক উপভোক্তা বলেন “ছেলেরা সংসার চালানোর জন্য ওই টাকা খরচ করে দিয়েছে। কী ভাবে বাড়ি বানাব? যখন যেমন টাকা পাব, তখন তেমন ভাবে বাড়ি বানাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement