দিন কয়েক আগে তৃণমূল পরিচালিত জগত্বল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন দলেরই কিছু সদস্য। ভোটাভুটিতে অনাস্থার পক্ষে ভোট দেওয়ায় সমিতির চার দলীয় সদস্যকে বহিষ্কার করল সিপিএম। ওই ভোটাভুটিতে সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিমকে হারতে হয়।
ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএমের সদস্যসংখ্যা ১৫। তাঁদের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ১০ জন। এই ১০ জনের মধ্যে আবার চার জন দলীয় সদস্য। তাঁদেরই দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয় সোমবার। বাকি ছ’জন দলের সদস্য না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তবে, ওই ছ’জনের সঙ্গে কোনও রকম সংস্রব রাখতে সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বকে নিষেধ করা হয়েছে বলে দলের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার জানিয়েছেন।
বহিষ্কৃত সিপিএমের চার দলীয় সদস্য প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তবে, ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা জানিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকেই বার বার বিদায়ী সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। বহুবার স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। তা হলে তাঁকে যখন অপসারণের সুযোগ এল, তখন তার সদ্ব্যবহার না করে তাঁদের অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে বলা হল কেন? তাঁদের প্রশ্ন, তা হলে বিদায়ী সভাপতি এবং জেলা সিপিএমের নেতাদের মধ্যে কী কোনও গোপন রফা হয়েছিল, যাতে সভাপতিকে ফের ক্ষমতায় রেখে দেওয়া হয়?
এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক বলেন, “গোপন রফার কোনও ব্যাপার নেই। আমাদের দলের নীতিই হল অন্য দলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে কোনও মতেই সমর্থন করা যাবে না। একই ঘটনা ঘটেছিল সাঁকরাইলের থানা-মাকুয়া পঞ্চায়েতে। সেখানেও আমরা চার জন সদস্যকে বহিষ্কার করেছি।” সিপিএমের সঙ্গে গোপন রফার কথা অস্বীকার করেন পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিম।
এই পঞ্চায়েত সমিতির মোট সদস্য ৪১ জন। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলের সদস্য ২৬ জন। বাকি ১৫ জন সিপিএমের। মহম্মদ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে তৃণমূল সদস্যদেরই একাংশের আনা অনাস্থার উপরে গত ২৩ নভেম্বর ভোটাভুটি হয়। অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দেওয়ার জন্য সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দলের ১৫ জন পঞ্চায়েত সমিতি সদস্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভোটাভুটির দিনে দেখা যায় দলের নির্দেশ মানেননি সিপিএমের একাংশ। সিপিএমের ১০ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য হাজির হন। তৃণমূলের ১৩ জন সদস্য ভোট দিতে আসেন। সভাপতি গরহাজির থাকা সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে অনাস্থা প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়।
এর পরেই বিতর্ক বাধে। মহম্মদ ইব্রাহিম অভিযোগ করেন, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লার অনুগামীরা সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁকে পদচ্যুত করিয়েছেন। এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেন কাশেম। অন্য দিকে সিপিএমের জেলা কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, যে সব সদস্য দলীয় নির্দেশ না মেনে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেইমতো সোমবার সন্ধ্যায় জগত্বল্লভপুরে দলের জোনাল কার্যালয়ে সভা ডেকে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।