দুই স্কুলের দ্বন্দ্বে থমকে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির কাজ

দুই স্কুলের দ্বন্দ্বের জেরে আটকে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার প্রকল্পে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তার কাজ। রাস্তার দু’প্রান্তের কাজ শেষ হয়ে গেলেও মাঝের অংশের প্রায় ১০০ ফুট আটকে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে ঠিকাদার সংস্থা। রাস্তাটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে যাঁদের সুবিধা হত, বিপাকে পড়েছেন সেই এলাকারা মানুষও। এ দিকে, সমস্যা না মিটলে কাজ করতে রাজি হচ্ছে না ঠিকাদার সংস্থাও।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

দুই স্কুলের দ্বন্দ্বের জেরে আটকে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার প্রকল্পে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তার কাজ। রাস্তার দু’প্রান্তের কাজ শেষ হয়ে গেলেও মাঝের অংশের প্রায় ১০০ ফুট আটকে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে ঠিকাদার সংস্থা। রাস্তাটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে যাঁদের সুবিধা হত, বিপাকে পড়েছেন সেই এলাকারা মানুষও। এ দিকে, সমস্যা না মিটলে কাজ করতে রাজি হচ্ছে না ঠিকাদার সংস্থাও। স্থানীয় প্রশাসন এবং স্কুল শিক্ষা দফতরের হস্তক্ষেপেও মেটেনি সমস্যা।

Advertisement

হাওড়ার জগত্‌বল্লভপুরের মাজু এলাকায় প্রায় চার একর জমির উপর আরএন বসু বয়েজ এবং আরএন বসু গার্লস নামে দু’টি হাইস্কুল রয়েছে। দুই স্কুলের মাঝে খেলার মাঠ। এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মাঠের প্রান্তে একটি রাস্তা। খেলার মাঠটি বয়েজ স্কুলের নামে। দু’টি স্কুল এবং খেলার মাঠের জন্য জমি দান করেছিলেন বরদাপ্রসাদ বসু। এ সব দেখাশোনার জন্য গড়ে দেন একটি ট্রাস্টি বোর্ড। মাঠের ধার দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা পাকা করার জন্য ব্যয়বরাদ্দ হয়েছে ২ কোটি টাকা। দক্ষিণ মাজু মান্নাপাড়া থেকে মাজু রজতপাড়া পর্যন্ত রাস্তাটি হওয়ার কথা। দু’প্রান্তের কাজ শেষ হলেও খেলার মাঠের জায়গায় এসে তা থমকে গিয়েছে।

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, মাজু আরএন বসু গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেয় মিড ডে মিলের জন্য রান্নাঘর ও ছাত্রীদের সাইকেল রাখার জন্য স্ট্যান্ড তৈরি করা হবে। সেইমতো কাজও শুরু করেছেন তাঁরা এবং কাজের জন্য রাস্তাটি মাঠের দিকে ঘুরিয়ে করার জন্য ঠিকাদারকে বলেন তাঁরা। কিন্তু এতে আপত্তি জানান বয়েজ স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মাঠটি তাঁদের। অথচ নির্মাণকাজ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া যে ভাবে মাঠের ধার দিয়ে রাস্তা আছে, এখন সেখান থেকে মাঠের ভিতরে কিছুটা ঢুকে এলে খেলার মাঠ ছোট হয়ে যাবে। এটা তাঁরা মানবেন না। যদিও গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের স্থানীয় সদস্য এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি জেলাশাসকের অনুমতি তাঁরা নিয়েছেন। ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য রবি বসু বলেন, নির্মাণের স্বার্থে গার্লস স্কুলকে সামান্য জায়গা ছেড়ে দিলে কোনও অসুবিধা হবে না। বয়েজ স্কুলের এ ব্যাপারে সহযোগিতা করা উচিত।

Advertisement

জেলা শাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক তথা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (সেকেন্ডারি) সঙ্গে বৈঠকে গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেওয়া হয়। বৈঠকে ঠিক হয়, রাস্তা-সহ বয়েজ স্কুলের দিকের মাঠের উপর ৩৩ ফুট জায়গায় নির্মাণকাজ করবে গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেইমতো গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে ৩৩ ফুট জায়গা ছেড়ে রাস্তা করতে বলেন। আর গোল বাধে এখানেই।

বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তিরঞ্জন ঘোষের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করেই গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষ নতুন নির্মাণ শুরু করেছে। গার্লস স্কুলকে ৩৩ ফুট জায়গা ছেড়ে দিলে বয়েজ স্কুলের মাঠের মাঝখান দিয়ে রাস্তা হবে। এতে ছাত্রদের খেলাধুলার অসুবিধা হবে। গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৈত্রেয়ী মুখোপাধ্যায় বলেন, “ট্রাস্টি বোর্ড যেখানে অনুমোদন দিয়েছে সেখানে বয়েজ স্কুলের সঙ্গে আলোচনার কোনও দরকার নেই। তা ছাড়া যে ভাবে স্কুলে ছাত্রী বাড়ছে তাতে সাইকেল স্ট্যান্ড ও মিড-ডে মিলের রান্নাঘর নির্মাণ খুবই দরকার।” দুই স্কুলের দ্বন্দ্বে ফাঁপড়ে পড়েছে ঠিকাদার সংস্থা। তাঁদের অভিযোগ, কাজ শুরু করতে গেলেই দুই স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধা দিচ্ছে। এই অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ও কাজের সুপরিবেশ না পেলে তাঁদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে ওই ঠিকাদার সংস্থা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু দু’পক্ষকে মুখোমুখী বসানো সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে শিক্ষা সংসদ। ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক হিসেবে জেলা স্কুল পরিদর্শক তাপস বিশ্বাস বলেন, “এ রকম একটা সমস্যা হচ্ছে শুনেছি। স্কুলের নির্মাণও যেমন দরকার তেমনই এলাকার মানুষের রাস্তাও জরুরি। দুই স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান বের করতে হবে।”

স্থানীয় তৃণমূল নেতা অলীপ খাঁ জানান, দু’টো স্কুলের দ্বন্দ্বে উন্নয়নমূলক কাজ আটকে যাবে এটা হতে পারে না। পঞ্চায়েত সমিতির তরফে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। জগত্‌বল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “খুব শীঘ্রই দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দা অশোক রায়, সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি খাকাপ অবস্থায় পড়েছিল। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় তা পাকা হচ্ছে। কিন্তু দু’টো স্কুলের গোলমালে যে ভাবে কাজ আটকে গিয়েছে তাতে গ্রামবাসীর সমস্যা হচ্ছে। এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এবং উন্নয়নের স্বার্থে স্কুলগুলির নিজেদের মধ্যে গোলমাল মিটিয়ে ফেলা উচিত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement