রিষড়া পঞ্চায়েত: আটকে নলকূপ, রাস্তা, নিকাশির কাজ

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে কাজকর্ম শিকেয়

দলীয় সদস্যদের চাপ দিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করালেও চাপা দেওয়া যায়নি গোষ্ঠীকোন্দল। ফলে দলীয় প্রধানের সঙ্গে কোনও সমন্বয় নেই তৃণমূলের অধিকাংশ পঞ্চায়েত সদস্যের। স্থায়ী সমিতিতে আলোচনা বন্ধ। সব মিলিয়ে উন্নয়ন স্তব্ধ হুগলির রিষড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রিষড়া শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share:

দলীয় সদস্যদের চাপ দিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করালেও চাপা দেওয়া যায়নি গোষ্ঠীকোন্দল। ফলে দলীয় প্রধানের সঙ্গে কোনও সমন্বয় নেই তৃণমূলের অধিকাংশ পঞ্চায়েত সদস্যের। স্থায়ী সমিতিতে আলোচনা বন্ধ। সব মিলিয়ে উন্নয়ন স্তব্ধ হুগলির রিষড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। পঞ্চায়েতের তরফে কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় সঙ্কট কাটাতে অবিলম্বে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তাঁরা।

Advertisement

সংখ্যার নিরিখে এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল অনেকটাই এগিয়ে। ২৮টি আসনের মধ্যে তাদের হাতে রয়েছে ১৮টি আসন, বামেদের দখলে ৮টি এবং বাকি দু’টি কংগ্রেসের দখলে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বোর্ড গঠনের কিছুদিন পর থেকেই তৃণমূলের বেশির ভাগ সদস্যের সঙ্গে প্রধান সুমিতা বড়ুয়ার মতবিরোধ শুরু হয়। কংগ্রেসের দুই সদস্যও প্রধানের কাজে অসন্তুষ্ট। দু’পক্ষের মতবিরোধের প্রভাব পঞ্চায়েতের কাজের উপর পড়ায় পঞ্চায়েতে নানা কাজে আসা সাধারণ মানুষ হয়রান হচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে দলীয় প্রধানকে অপসারিত করতে আসরে নামেন তৃণমূল সদস্যরাই। মাস কয়েক আগে প্রধান সুমিতা বড়ুয়ার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে উপপ্রধান-সহ ১৪ জন তৃণমূল সদস্য বিডিওর কাছে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন। কংগ্রেসের দুই সদস্যও অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেন। এর পরেই দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাপা দিতে উদ্যোগী হন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

তাঁদের চাপে কয়েক জন তৃণমূল সদস্য বিডিও-কে ফের চিঠি দিয়ে জানান, তাঁরা অনাস্থা তুলে নিতে চান। চিঠি পেয়ে তলবি সভা বাতিল করে প্রশাসন। এর পর তাঁর ইন্ধনেই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল এই অভিযোগে তৃণমূল নেতৃত্ব দলের শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লক সভাপতি সুব্রত রায়কে থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু অনাস্থা পর্ব সামলে তৃণমূল নেতৃত্ব পঞ্চায়েতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারলেও সমস্যা বেড়েছে বই কমেনি। এই ঘটনার পরে আরও প্রকাশ্যে এসেছে দলের গোষ্ঠীকোন্দল। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম লাটে উঠেছে। পরিষেবা না পেয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, তিন মাস ধরে স্থায়ী সমিতিগুলিতে কার্যত কোনও বৈঠকই হচ্ছে না। ফলে পরিষেবা নিয়ে কোনও পরিকল্পনাই তৈরি করা যাচ্ছে না। সাধারণ সভায় অনুপস্থিত থাকছেন অনেক সদস্যই। ফলে সেখানেও আলোচনা হচ্ছে না। গত শুক্রবার সাধারণ সভায় সাকুল্যে ৯ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সিপিএমের ৪ জন, প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য-সহ তৃণমূলের ৫ জন। ফলে নলকূপ সারানো থেকে নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার, ১০০ দিনের কাজে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা যাচ্ছে না।

Advertisement

গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, বামুনারি সারদাপল্লি নিচপাড়া, বর্মনপাড়া, পাঁচলকি, পঞ্চাননতলা, নতুনগ্রামের নিকাশির হাল খুবই খারাপ। সারদাপল্লি-বারুজীবী রাস্তার সংযোগকারী রাস্থার অবস্থা শোচনীয়। সেটি সারানোর ব্যাপারে পঞ্চায়েতের কোনও উদ্যোগ নেই। মোল্লাবেড়, মীরপুর-সহ বেশ কিছু জায়গায় বিকল নলকূপ সারানোই হচ্ছে না। পঞ্চায়েত সূত্রেই খবর, ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকরা টাকা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। টাকা দিতে না পারায় পঞ্চায়েত দফতরের টেলিফোন লাইন কাটা গিয়েছে। প্রধানের বিরোধী গোষ্ঠীর এক সদস্যর কথায়, “পঞ্চায়েতের কোনও আয় হচ্ছে না। কর আদায় কার্যত বন্ধ।” কংগ্রেস সদস্য শেখ রশিদ বলেন, ‘‘পরিষেবা শব্দটাই আমরা ভুলতে বসেছি, মানুষের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে, এই অচলাবস্থা রুখতে প্রশাসন কিছু একটা করুক।’’

পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্য জানান, শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন দলের নেতারা। প্রধানের একতরফা সিদ্ধান্তেই পঞ্চায়েতের কাজ স্তব্ধ। মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। এই ভাবে কোনও পঞ্চায়েত চলতে পারে না।’’ পঞ্চায়েতের একটি স্থায়ী কমিটির সঞ্চালকের অভিযোগ, দল তাঁদের কথায় কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না।

দলের সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধ এবং পরিষেবার সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি প্রধান। তিনি বলেন, ‘দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের কাছে সমস্ত সমস্যার কথা জানিয়েছি। এ ব্যাপারে দল যা নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’’

তৃণমূল নেতা পিনাকি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতে নিজেদের মধ্যে একটা সমস্যা হয়েছে। তবে তা এমন কিছু নয়। দলের তরফে দু’পক্ষকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement