পটুয়াপাড়ায় ব্যস্ত শিল্পী। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
জেলার মানুষ একে মিনি কুমোরটুলি বলে জানে। কিন্তু হাওড়ার ডোমজুড়ের মহিয়াড়ি-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেই মিনি কুমোরটুলি প্রশস্ত গ্রামের বাজার এ বার মন্দা। জেলার প্রতিমা তৈরির অন্যতম প্রধান শিল্পালয়ে প্রায় ৩৫ ঘর শিল্পী আছেন। সারা বছর ধরে নানা পুজো পার্বনে প্রতিমা তৈরি হলেও দুর্গাপুজোর সময় স্বাভাবিক ভাবেই এখানকার শিল্পীদের নাওয়া-খাওয়ার ফুরসত থাকে না। বছরের এই সময়টাতেই শিল্পীরা প্রচুর দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখেন। কিন্তু এ বার মিনি কুমোরটুলির বাজার মন্দা।
পুজোর এক মাসও বাকি নেই। দিন কয়েক আগে মুম্বই রোড থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল চারপাশেই জোরকদমে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। খড়ের কাঠামো তৈরি থেকে মাটি লেপার কাজ করছেন শিল্পীর সহকারীরা। বেশ কিছু প্রতিমা ইতিমধ্যেই তৈরিও হয়ে গিয়েছে। জানা গেল, এ বার প্রায় ৫০০ প্রতিমা হচ্ছে। অনেকেই এ বার আগের তুলনায় কম প্রতিমা তৈরি করছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করায় এক শিল্পী জানালেন, কাঁচা মালের দাম যে ভাবে বেড়ে গিয়েছে তাতে লেবার রেখে মজুরি দিয়ে ঠাকুর তৈরি আর পোষাচ্ছে না। একটা প্রতিমা তৈরিতে যা খরচ পড়ে বেশিরভাগ সময়েই তা ওঠে না। তা ছাড়া পুজোর উদ্যোক্তারাও দাম নিয়ে দরাদরি করেন। ফলে লাভ না থাকায় ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির অবস্থা। আর এক শিল্পীর কথায়, বৃষ্টির জন্য অনেক সময়েই নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু পুজো কমিটি তো তা শুনবে না। তাই অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে লেবার নিয়ে কাজ করাতে হয়। ফলে খরচ বাড়ে। কিন্তু পুজো কমিটিগুলির কাছ থেকে সে জন্য বেশি দাম মেলে না। ফলে অনেকেই প্রতিমা তৈরির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, গত কয়েক বছরে যে ভাবে খড়, মাটি, বাঁশ, কাপড়ের দাম বেড়ে সে ভাবে প্রতিমার দাম বাড়েনি। মৃৎশিল্পী অঞ্জন পাল, গণেশ চিত্রকর, চণ্ডী চিত্রকর জানালেন, গত বছর বাঁশের দাম ছিল ১৫০টাকা। এ বার হয়েছে ১৮০ টাকা। পাঠ ছিল ৩২ টাকা, হয়েছে ৪০ টাকা। খড়ের বান্ডিল ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা হয়েছে। এক বস্তা গঙ্গার পলি মাটির দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা হয়েছে। বেড়েছে পেরেক, রং, কাপড়, শোলার দাম। লেবার খরচও ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রতিমার দাম সেই অনুপাতে বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ বেশি দাম চাইলে পুজো কমিটিগুলি বেঁকে বসছে।
শিল্পীদের আরও অভিযোগ, সরকারি ভাবে ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে নানা ঝামেলায় পড়তে হয় তাঁদের। এ দিকে সময়ে টাকা না পেলে কাজ শুরু করতেও সমস্যা হয়। ফলে মহাজনদের থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করতে বাধ্য হন তাঁরা। সরকারি ঋণ পাওয়া সহজ হলে তাঁদের অন্তত বাজার থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয় না।
এত সমস্যার পরেও ঠাকুর তৈরির প্রসঙ্গে শিল্পীদের বক্তব্য, এটাই তাঁদের পেশা। তা ছাড়া ব্যবসায়িক দিকের পাশাপাশি এর সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। ফলে সংখ্যায় কমে গেলেও অনেকে এখনও প্রতিমা তৈরি করছেন। তবে এমন অবস্থা চলতে থাকলে মিনি কুমোরটুলি থেকে হয়তো অনেকেই পাততাড়ি গোটাবেন।