পুলিশ ফাঁড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। ছবি: তাপস ঘোষ
আগের দিন কাজ না করে ফিরে গিয়েছিলেন। বুধবার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখালেন শ্রমিকেরা। স্মারকলিপি দেওয়া হল মহকুমাশাসককে। সব মিলিয়ে, শ্রমিকদের আন্দোলনের জেরে অচলাবস্থা কাটল না ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া চটকলে। উৎপাদন বন্ধ থাকল বুধবারও। বিক্ষোভকারীদের সাফ কথা, যে যেখানে কাজ করছেন, সেখানেই থাকবেন। কাউকে অন্য বিভাগে সরানো চলবে না। শ্রমিক সংগঠনগুলি কেন কর্তৃপক্ষের কথায় সায় দিচ্ছে, তা নিয়েও এ দিন সোচ্চার হয়েছেন শ্রমিকেরা।
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে দু’মাস বন্ধ থাকার পরে মঙ্গলবার উৎপাদন চালু হওয়ার কথা ছিল ওই চটকলে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্পিনিং বিভাগের কিছু শ্রমিককে অন্য বিভাগে সরানো এবং মেশিন প্রতি এক জনকে কাজ করানোর বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় তা মানতে না চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকেরা। ফলে উৎপাদন চালু হয়নি।
বুধবার সকালে কয়েকশো শ্রমিক স্থানীয় তেলেনিপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। গোলমালের আশঙ্কায় ফাঁড়ি এবং চটকল চত্বরে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পুলিশকে স্মারকলিপি দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের তরফে। তাঁদের অভিযোগ, জোর করে বাড়তি কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের কাঁধে। শ্রমিকদের সায় না নিয়েই মালিকপক্ষের কথা কেন মেনে নিলেন শ্রমিক নেতারা, সেই প্রশ্নও তোলা হয়। অন্য দিকে, চন্দননগরের প্রাক্তন বিধায়ক, সিপিএম নেতা শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তিনটি বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের তরফে মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
চটকলের তাঁতঘর বিভাগের শ্রমিক মহম্মদ আসলাম বলেন, ‘‘মিলের কিছু কর্তা এবং শ্রমিক নেতা একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে মিলটাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। আমাদের উপর যে জুলুম চলছে, নেতারা তা দেখছেন না। তাই রুখে দাঁড়িয়েছি।’’ শিবপ্রসাদবাবুর দাবি, ‘‘বৈঠকের সিদ্ধান্ত মালিকপক্ষ মানছেন না। তাই স্বাভাবিক কারণেই অশান্তি ছড়িয়েছে। শ্রমিকদের কথা ভেবে অবিলম্বে সুষ্ঠু মীমাংসা করে উৎপাদন চালু হোক।’’
শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত অবশ্য এ হেন পরিস্থিতির জন্য সিটুকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সিটুর লোকেরাই অশান্তি করছেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আলোচনার মাধ্যমে উৎপাদন চালু করা যায়।’’ এ দিনও মালিকপক্ষের তরফে জানানো হয়, সুষ্ঠু ভাবে মিল চালানোর জন্যই কিছু শ্রমিককে অন্য বিভাগে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা নেই। অকারণেই শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছেন না।
চন্দননগরের উপ শ্রম-কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের সম্ভবত বোঝানো যায়নি। শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের উচিত ছিল, শ্রমিকদের একত্রিত করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া। তা হলে এই সমস্যা হত না।”