অন্য পুরসভার সঙ্গে একগোত্রে চন্দননগর, নারাজ বামেরা

হুগলির দশটি পুরসভাকে এক ছাদের তলায় এনে রাজ্য সরকারের কর্পোরেশন করার উদ্যোগের বিরোধিতা করে বৈঠকে এল না বামফ্রন্ট। চন্দননগর পুরসভায় সোমবার প্রশাসনিক স্তরের ওই বৈঠকে ছিলেন না পুরসভার কোনও বাম কাউন্সিলার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৩
Share:

চন্দননগর পুরভবন। —নিজস্ব চিত্র।

হুগলির দশটি পুরসভাকে এক ছাদের তলায় এনে রাজ্য সরকারের কর্পোরেশন করার উদ্যোগের বিরোধিতা করে বৈঠকে এল না বামফ্রন্ট।

Advertisement

চন্দননগর পুরসভায় সোমবার প্রশাসনিক স্তরের ওই বৈঠকে ছিলেন না পুরসভার কোনও বাম কাউন্সিলার। চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “আমাদের বৈঠক যথারীতি হয়েছে। চন্দননগরকে প্রধান কার্যালয় হিসেবে বিবেচনা করে সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকেও আমরা তা জানিয়েছি।”

যদিও চন্দননগরের অবনমনের পাশাপাশি সরকারের এই উদ্যোগে পুর পরিষেবা ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা করছেন পুরসভার কাউন্সিলররা। সরকরে এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যেই জেলাশাসক, মেয়র-সহ রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরে চিঠি দিয়েছে বামেরা। পুরসভার বিরোধী দলনেতা গোপাল দাস হুমকি দিয়েছেন, এই ব্যাপারে সরকার আরও পদক্ষেপ করলে বৃহত্তর প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, হুগলির উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া গঙ্গাপারের প্রতিটি পুরসভাকে এক ছাদের তলায় এনে একটি কর্পোরেশন গঠন করা হবে। রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি জানান, রাজ্য সরকার এই ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ এমন সিদ্ধাম্ত?

এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের যুক্তি, এক ছাদের তলায় সব পুরসভাকে নিয়ে এলে নাগরিকদের উন্নত পুরপরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তা ছাড়া নতুন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রকল্পে অনেক বেশি পরিমাণে টাকা পাওয়া যাবে।

রাজ্য সরকার যখন নতুন এই ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে, তখন বামেরা এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এর আগে ১৯৫৩ সালে চন্দননগরকে মামুলি পুরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল ভারত সরকারের তরফে। সেই সময় এর বিরোধিতা করা হয়েছিল দলমত নির্বিশেষে। বর্তমানেও সেই ধাঁচেই আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বামেরা।

সরকারি এই উদ্যোগ নিয়ে যে যে কারণে বামেদের আপত্তি তা হল,

১) বাঁশবেড়িয়া থেকে উত্তরপাড়া পর্যন্ত মোট ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা এবং ৩টি মহকুমার মানুষকে একই ছাদের তলায় আনা অবাস্তব পরিকল্পনা।

২) উন্নয়ন এবং সুষ্ঠ পরিবেষার জন্য বর্তমানে বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে। বহুক্ষেত্রেই প্রয়োজনে জেলা ভাগ হচ্ছে। কোথাও রাজ্য ভাগ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ঠিক উল্টোপথে হাঁটছে।

৩) এই পদক্ষেপ কার্যকর করা হলে পুরপরিষেবা ব্যাহত হবে। জনসংখ্যার নিরিখে মোট উন্নয়নের বরাদ্দ কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা।

৪) চন্দননগর পুরনিগম অন্য পুরসভাগুলির থেকে বিশেষ কিছু সুবিধা পায়। এখানকার বিদ্যালয়গুলি পুরনিগম পরিচালিত। বিদ্যালয়গুলি আর্থিক সুবিধা পায়। রাজ্য সরকার অনুমোদিত একটা শিক্ষা কমিটি রয়েছে পুর স্কুলগুলি পরিচালানায়।

৫) ক্রীড়া ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে চন্দননগর একটি জেলা হিসেবে স্বীকৃত। বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেক্ষেত্রেও।

৬) চন্দননগর সংলগ্ন গঙ্গার ঘাটগুলি পুরনিগমের মালিকানার ভিত্তিতে চলে। নতুন ব্যবস্থা কী হবে তা নিশ্চিত নয়।

এই জাতীয় নানা সুযোগ-সুবিধা চন্দননগর কর্পোরেশন পেয়ে আসছে। বাম ও তাদের মনোভাবাপন্ন সংশ্লিষ্ট দলগুলি মনে করে নতুন ব্যবস্থায় এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে চন্দননগর বঞ্চিত হবে।

শুধু বামেরাই নয়, এক ছাদের তলায় ১০টি পুরসভাকে নিয়ে এলে পরিস্থিতি ঠিক কী দাঁড়াবে সেই নিয়ে চন্দননগরের বিশিষ্ট জনেরাও সন্দিহান। তাঁদের অনেকেরই মত, এখন একটি পুরসভার দায়িত্বে থেকেই অনেক সময় পুর পরিষেবা সুষ্ঠভাবে পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ মানুষকে যখন একই পরিকাঠামোর আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তখন পরিষেবার হাল নিয়ে চিন্তা হওয়া তো স্বাভাবিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement