ছবি: তাপস ঘোষ।
শর্ত ছিল নানা। এবং সেই সব শর্ত মানার ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি হবে না প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরেই চন্দননগর পুরসভাকে যাত্রী পারাপারের জন্য তিন বছরের লিজে দু’টি লঞ্চ দেয় রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগম। মেয়াদ অন্তে ফের লিজের পুনর্নবীকরণের কথা। কিন্তু মেয়াদের আগেই বিষয়টি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
চন্দননগরের যাত্রীদের কথা ভেবে লঞ্চদু’টি দেওয়া হলেও শর্ত ভেঙে সেগুলি অন্য রুটে ভাড়ায় খাটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এর ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন চন্দনগরের যাত্রীরা।
চন্দননগরে ফেরি পারাপারে যাত্রীদের সুবিধার্থে মাস কয়েক আগে রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমের তরফে চন্দননগর পুর কতৃর্পক্ষকে দুটি লঞ্চ দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, চন্দননগর পুর এলাকার পাশাপাশি যাঁরা জলপথে লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতায় যাতায়াত করেন তাঁরা যেন ভাল পরিষেবা পান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি জনপ্রিয় প্রকল্প কন্যাশ্রী এবং যুবশ্রীর নামে লঞ্চদু’টির নামকরণ করা হয়। চন্দননগরের রানীঘাট থেকে উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল ঘাটে চলাচল করার কথা লঞ্চ দু’টির। কারণ, ওই রুটে প্রতিদিন জলপথে কয়েকশো মানুষ যাতায়াত করেন।
চন্দননগর পুর কর্তৃপক্ষকে লঞ্চ দু’টি হস্তান্তরের সময় ভূতল পরিবহণ নিগমের তিনটি শর্ত ছিল--
১) ওই লঞ্চ চলাচলের রুট পরিবর্তন করা যাবে না। ২) কাউকে ভাড়া ( সাব লেট) দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ পুর কতৃর্পক্ষ কোনওভাবেই লঞ্চ দুটি অন্যত্র চলাচলের জন্য ভাড়ায় বা লিজে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না। ৩) লঞ্চে কোনও সংস্থার প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষ চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন না। যদি কোনও সংস্থা লঞ্চ দুটিতে বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী হন সে ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষ ভূতল পরিবহণ নিগমের কর্তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।
কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ লঞ্চ দু’টি পাওয়ার পর বাস্তবে উল্টোপথে হাঁটছেন বলে অভিযোগ। রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমের কোনও শর্তই তাঁরা মানছেন না বলে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। স্থানীয় মানুযের অভিযোগ, রাজ্য সরকার যখন চন্দননগরের বাসিন্দাদের জন্যই লঞ্চ দু’টি দিয়েছে, তখন পুর কর্তৃপক্ষ কেন তা এলাকায় চালাচ্ছেন না। এতে তাঁরা ভাল পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পুরসভারই একটি সূত্রে খবর, চন্দননগর লাগোয়া এলাকা চুঁচুড়ার ফেরিঘাটে বর্তমানে লঞ্চ দু’টি চলছে। সেখানে যিনি ফেরিঘাট চালানোর দায়িত্বে আছেন তিনিই ওই দুটি লঞ্চ চালাচ্ছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায়, চন্দননগর পুরসভার বিরোধী দলনেতা গোপাল দাস প্রতিবাদ করেন। তিনি দ্রুত লঞ্চ দুটিকে চন্দননগরের মানুষের জন্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে মেয়র রাম চক্রবর্তীর যুক্তি, ‘‘অনেক সময় যাত্রীদের চাপ থাকলে চুঁচুড়ায় সাময়িক ভাবে নিয়ে যাওয়া হয় লঞ্চগুলি। তবে এলাকার মানুষের পরিষেবা যাতে বিঘ্নিত না হয় তা অবশ্যই দেখা হয়। চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ও বাইরে থেকে বিশেষ প্রয়োজনে অন্য লঞ্চ আনা হয়।’’ কিন্তু শর্ত মেনে লঞ্চ দু’টি পাওয়ার পরেও শর্ত না মেনে সেগুলি অন্য রুটে কেন চালানো হচ্ছে তার স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি মেয়রের কাছে। লিজের শর্ত না মানায় যদি ভূতল পরিবহণ নিগম লঞ্চদু’টি ফিরিয়ে নেয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে তারও স্পষ্ট উত্তর দেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগম গত বছর হুগলির তিনটি পুরসভাকে দুটি করে মোট ছ’টি লঞ্চ দেয়। উত্তরপাড়া, চুঁচুড়া এবং চন্দননগর পুরসভা লঞ্চগুলি পায়। সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল, জলপথে স্থানীয় মানুষকে উন্নত পরিষেবা দেওয়া। এখন প্রশ্ন, স ব জেনেও চন্দননগর পুর কর্তৃপক্ষ কী ভাবে সেই নিয়ম অগ্রাহ্য করলেন?