রাস্তায় নেমে যাঁদের আন্দোলন করার কথা, তাঁরা তা ভুলে নাচ-গান, ডিসকো, হই-হুল্লোড় নিয়ে মেতে রয়েছেন। আর সেটাই সিপিএমের খেতমজুর আন্দোলনে ভাটার কারণ।
সম্প্রতি আমতায় সারা ভারত কৃষকসভার হাওড়া জেলা সম্মেলনে প্রতিবেদনে এমনই তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, জমির মালিকদের প্রতি চিরাচরিত বিদ্বেষের মনোভাবেও পরিবর্তন ঘটছে খেতমজুরদের মধ্যে। জেলার এই ছবি রীতিমত চিন্তায় ফেলেছে বাম নেতৃত্বকে। তাঁদের মতে এ সবের জন্যই আগের মতো আর আন্দোলন গড়ে তোলা যাচ্ছে না।
আন্দোলনের ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে খেতমজুর আর শ্রমজীবী অংশকে অন্যতম প্রধান শক্তি হিসাবে মনে করে সিপিএম। সে জন্যই খেতমজুর আর শ্রমজীবী অংশকে সংগঠিত করার কাজকে দল বরাবরই অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে আগের মতো আর নেই, কৃষকসভার বার্ষিক প্রতিবেদনে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
প্রতি বছর দলের কৃষকসভার নেতৃত্বেই খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন সংগঠিত হয়। অনেক সময় চাষের মরসুম শুরু হওয়ার আগে ধর্মঘটও করা হয়। ২০১৩ এবং ২০১৪ পর পর দু’ বছর কৃষি কাজ বন্ধ রেখে খেতমজুরেরা ধর্মঘট করেছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালে খেতমজুরদের নিয়ে কার্যত কোনও আন্দোলন করাই যায়নি। কৃষকসভার নেতৃত্বের বক্তব্য, ওই বছর কৃষক জাঠা সফল করতে নেতারা ব্যস্ত ছিলেন। তা ছাড়া খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁদের ব্যর্থতা ছিল। তবে আন্দোলন না গড়ে ওঠার আর কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে সিপিএম। সেগুলি হল, দিনমজুরি করার বদলে চুক্তি চাষেই এখন খেতমজুরদের আগ্রহ বেশি। কারণ এতে তাঁদের উপার্জন এমনিতেই বেড়ে গিয়েছে। জমির মালিককে অগ্রিম টাকা দিয়ে খেতমজুরেরা নিজেরাই ইচ্ছামতো জমি চাষ করছেন। পছন্দমত জমি পেতে খেতমজুরদের মধ্যে জমির মালিকদের সঙ্গে সখ্যতা স্থাপনের প্রবণতা বাড়ছে। ফলে অতীতের শ্রেণি বিদ্বেষের ছবিটাও দ্রুত বদলে যাচ্ছে। সর্বোপরি গ্রামাঞ্চলে নাচ-গানের অনুষ্ঠান, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির (ডিসকো নাচ) বাড়-বাড়ন্ত। নেতৃত্বের দাবি, সুস্থ সংস্কৃতির বদলে এসবেরই ব্যাপক প্রভাব পড়ছে খেতমজুর ও শ্রমজীবী যুবকদের উপরে। ফলে রাস্তায় নেমে আন্দোলনে আগ্রহ হারাচ্ছেন তাঁরা।
আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে সিপিএম।