উলুবেড়িয়া আদালত চত্বরে ধৃত শুভ দলুই। ছবি: সুব্রত জানা।
পাড়ার দুঃস্থ পরিবারের সদ্যোজাতকে দেখভাল করার নামে নিয়ে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে হাওড়ার জয়পুরের এক যুবককে শ্যামপুর থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বাগনানের হাটুরিয়ার এক দম্পতির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে শিশুটিকে।
শুক্রবার বিকেলে জয়পুরের ঝামাটিয়া এলাকার বাসিন্দা শুভ দলুই নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। ওই এলাকারই বাসিন্দা, সদ্যোজাতের মা পুতুল প্রামাণিকের অভিযোগের ভিত্তিতে শুভকে পুলিশ ধরে। শনিবার তাকে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আদালতে গোপন জবানবন্দি দেন বাগনানের ওই দম্পতি। শিশু এবং মাকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে পাঠায় পুলিশ। পুলিশ জানায়, গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃত শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িত কিনা, তা-ও তদন্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুতুলের স্বামী শম্ভু দক্ষিণ শহরতলির সন্তোষপুরে একটি সাইকেলের দোকানে কাজ করেন। দম্পতির বছর দশেকের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। গত মঙ্গলবার পুতুল ফের একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন বাড়িতেই। শুভ আদতে জয়পুরের খালনার বাসিন্দা হলেও ঝামাটিয়াতেই থাকে। এলাকায় সে ‘জামাই’ নামে পরিচিত। পুতুলের কাছে তাঁর সদ্যোজাতকে লালন পালন করার ইচ্ছে প্রকাশ করে শুভ। পুতুল অমত করেননি। বুধবারই তিনি শিশুটিকে শুভর হাতে তুলে দেন।
তদন্তকারীদের দাবি, জয়পুরের এক দাঁতের চিকিৎসকের মাধ্যমে বাগনানের ওই নিঃসন্তান দম্পতির সঙ্গে আগেই আলাপ হয়েছিল শুভর। তাঁরা সন্তান দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। গত বুধবার শিশুটিকে নিজের সন্তান দাবি করে এবং লালনে অক্ষমতার কথা জানিয়ে শুভ ওই দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। ওই দম্পতির আত্মীয়ের বাড়ি বীরশিবপুরে। সেখানেই শুভ শিশুটিকে বিক্রির জন্য ২৫ হাজার টাকা চায় বলে অভিযোগ। ওই দম্পতি শুভর কাছে শিশুটির জন্মের শংসাপত্র এবং সে যে স্বেচ্ছায় শিশুটিকে দিয়ে দিচ্ছে, এ কথা লিখিত ভাবে জানানোর জন্য বলেন। প্রাথমিক ভাবে শিশুটির জন্য দম্পতি ১০ হাজার টাকা দেন শুভকে। কিন্তু শুভ সেই কাগজপত্র আর দেয়নি। এ দিকে, শুভর কাছে নিজের সন্তানকে না পেয়ে পুতুল বৃহস্পতিবার শ্যামপুরের বাছরির ভগবতীপুরে বাপের বাড়িতে গিয়ে সব কথা জানান। এর পর শুক্রবার অভিযোগ দায়ের হয় থানায়।
পুলিশ জানায়, শিশুটির জন্মের শংসাপত্র দেওয়ার কথা বলে পুতুলকে দিয়ে শুভকে ফোনে ডাকা হয়। শুভ শ্যামপুরে এসে ধরা পড়ে। শুভকে সঙ্গে নিয়ে বীরশিবপুরে গিয়ে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। বাগনানের ওই নিঃসন্তান দম্পতি এবং চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।