বড়দিনের খুশিতে শিকেয় উঠল পরিবেশ ভাবনা

কলকাতা থেকে জঙ্গলে বনভোজনের আনন্দ নিতে সোমবার সকাল সকাল ৮০ কিলোমিটার উজিয়ে আরামবাগের চাঁদুর ফরেস্টে পৌঁছেছিলেন ওঁরা। সেখানে যে পরিস্থিতির মুখে পড়লেন, তাতে চক্ষু চড়কগাছ। দৃশ্যটা এরকম— চার দিকে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া শালপাতার ঠোঙা নিয়ে টানাটানি করছে কাকের দল, কুকুর।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০২
Share:

বড়দিনের বনভোজনের পর। চাঁদুর ফরেস্টে মোহন দাসের তোলা ছবি।

কলকাতা থেকে জঙ্গলে বনভোজনের আনন্দ নিতে সোমবার সকাল সকাল ৮০ কিলোমিটার উজিয়ে আরামবাগের চাঁদুর ফরেস্টে পৌঁছেছিলেন ওঁরা। সেখানে যে পরিস্থিতির মুখে পড়লেন, তাতে চক্ষু চড়কগাছ। দৃশ্যটা এরকম— চার দিকে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া শালপাতার ঠোঙা নিয়ে টানাটানি করছে কাকের দল, কুকুর। ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে মদের খালি বোতল। যা দেখে বাড়ির লোকজনের সামনে রীতিমতো বিব্রত আনন্দ মল্লিক। বললেন, ‘‘পরিস্থিতি যা, এ বার থেকে হয়তো ঝাঁটা নিয়ে বনভোজনে আসতে হবে। অন্য কেউ এলে তাঁদেরও একই পরামর্শ দেব।’’

Advertisement

ছবিটা কিছুমাত্র আলাদা নয় গোঘাটের গড় মান্দারণে। আরামবাগ মহকুমার এই পর্যটন কেন্দ্রে ঢুকতে মাথাপিছু ১০ টাকা করে নেওয়া হয়। রবিবার বড়দিন উপলক্ষে Mএখানে টিকিট বিক্রি বাবদ জেলা পরিষদের পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় হয়েছে। অথচ জেলা পরিষদের দেখভালের অভাবে নাভিশ্বাস উঠছে জেলার অন্যতম প্রধান এই পর্যটন কেন্দ্রের।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে জেলায় পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড় মান্দারণ এবং সবুজদ্বীপকে এক পঙক্তিতে বসিয়েছিলেন। তারপরই পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে গড় মান্দারণে। এ বার বড়দিনে এখানে এসেছিলেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। গড় মান্দারণ এবং চাঁদুর জঙ্গল মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭৫টি চড়ুইভাতি দলের গাড়ি ঢুকেছিল। চাঁদুর জঙ্গলের হাল নিয়ে এক বনকর্তাকে প্রশ্ন করতেই তিনি রীতিমত ফোঁস করে উঠলেন। বললেন, ‘‘ঝাঁ-চকচকে করে পরিষ্কার করার মতো এত কর্মী কোথায়? টাকাই বা কোথায়?’’

Advertisement

শুধু এই দু’টি জায়গাই নয়, চন্দননগরের কেএমডিএ পার্ক, ছুটি পার্ক, নিউ দিঘা সর্বত্রই কমবেশি একই ছবি চোখে পড়েছে। হুগলিতে গঙ্গার ধার লাগোয়া বিভিন্ন জায়গাতেও উৎসবের দিনে বহু মানুষ ভিড় জমান। তার চিহ্ন হিসেবেই ওই সব জায়গায় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ থেকে অন্যান্য আবর্জনা ছড়িয়ে থাকে। বস্তুত, শুধু হুগলি নয়, বালি থেকে কল্যাণী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় গঙ্গার ধারের অবস্থা এমনই কাহিল বলে অভিযোগ পরিবেশপ্রেমীদের।

হুগলিতে গঙ্গার পাড়ে হংসেশ্বরী মন্দির, গাজি দরগা, চন্দননগরের পাতালবাড়ি, স্ট্র্যান্ডঘাট, চুঁচুড়ার অন্নপূর্ণা ঘাটের মতো জায়গা রয়েছে।

এ নিয়ে মামলার প্রেক্ষিতে পরিবেশ আদাল‌ত বা হাইকোর্টের তরফে রাজ্য সরকারকে কারণ দর্শাতেও বলা হয়েছে। কিন্তু এত সবের পরেও গঙ্গার ঘাটের হাল ফেরেনি। চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমির কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গঙ্গার সাঙ্ঘাতিক অবস্থা। গঙ্গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। জগদ্দলে বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে। সবকিছুই চলছে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে। গঙ্গা বাঁচাতে পরিবেশ আদালত এবং হাইকোর্টে মামলা করার চিন্তা-ভাবনা করছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement