নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। দলের প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় দেওয়াল লিখনে নেমে পড়েছেন তৃণমূেলর নেতা-কর্মীরা। শুক্রবার বলাগড় ও চুঁচুড়ায়। ছবি-প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ।
গতবার জিতেছিলেন। তাই আশা ছিল এ বারও ওই কেন্দ্রেই প্রার্থী করা হবে তাঁকে।
কিন্তু শুক্রবার বিকেলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর যে তালিকা পেশ করলেন, দেখা গেল প্রার্থী হওয়ার আশা পূরণ হলেও বদলে গিয়েছে জগৎবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লার কেন্দ্র। এ বার তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে। যেখানে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে দল রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
বিধায়কের ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, প্রার্থী করা হলেও প্রকারান্তরে তাঁকে বাদই দেওয়া হয়েছে। যদিও এ সব মানতে নারাজ কাশেম বলেন, ‘‘দলের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসাবে যে কেন্দ্রে আমাকে দেওয়া হয়েছে সেখানেই আমি লড়াই করব। হেরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলেও পিছিয়ে আসব না।’’
জগৎবল্লভপুর থেকে কেন সরানো হল কাশেমকে?
জেলার রাজনৈতিক মহল তথা তৃণমূলের একাংশের ধারণা, জগৎবল্লভপুরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব লাগামছাড়া হয়ে উঠেছিল। যার প্রভাব পড়ে উন্নয়নের কাজে। জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রথম যিনি সভাপতি হয়েছিলেন সেই মহম্মদ ইব্রাহিমকে সরতে হয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই। নতুন সভাপতি এলেও উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি বললেই চলে। এমনকী গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ না করতে পারায় দলের জেলা (সদর) সভাপতি অরূপ রায় মমতার কাছে তিরস্কৃতও হন। কিন্তু তারপরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমেনি। দলের রাজ্য নেতৃত্ব এর দায় অনেকটাই চাপিয়েছিলেন বিধায়কের উপরেও। যদিও কাশেম গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সকলকে নিয়েই চলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দলেরই একটি অংশ আমার বিরুদ্ধে বরাবর চক্রান্ত করে এসেছে।’’
তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে কাশেম বাদ পড়লেও বেঁচে গিয়েছেন উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক নির্মল মাজি। তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছিল তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে। উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের অধীন আমতা ১ এবং উলুবেড়িয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির বহু পদাধিকারী, সদস্য, দলের স্থানীয় নেতা, এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা নির্মলবাবুর প্রার্থীপদ রদ করার দাবি জানিয়েছিলেন। উদ্ধত ব্যবহার, দলের কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, ঠিকাদারদের সঙ্গে ওঠাবসা এইসব অভিযোগ তুলে তাঁরা জানিয়েছিলেন ‘নির্মলবাবুকে প্রার্থী করা হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে’।
তবে এ সব অভিযোগকে তৃণমূলনেত্রী যে পাত্তা দেননি তার প্রমাণ, ফের নির্মল মাঝিকেই প্রার্থী করেছেন তিনি। খুশি নির্মলবাবুর দাবি, ‘‘নেত্রীর আদর্শ মেনে দিনে ১৯ ঘণ্টা কাজ করি আমি। আর যে কাজ করে তারই তো সমালোচনা হয়। কে কী বলেছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’’ যাঁরা নির্মলবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, এদিন প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম দেখে হতাশা চেপে রাখতে পারেননি। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘কী আর করা যাবে। দলটা তো করি। তাই দলের মুখ চেয়ে ‘সাপের ছুঁচো গেলার’ অবস্থা নিয়ে আমাদের ভোটের কাজ করতে হবে।’’
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছিল সাঁকরাইল এবং পাঁচলা কেন্দ্রেও। পাঁচলায় তৃণমূল বিধায়ক গুলশনের বিরুদ্ধে অনুন্নয়নের অভিযোগ তুলে তাঁকে এ বার টিকিট না দেওয়ার দাবি জানিয়ে একাধিকবার রাস্তা অবরোধ করেন দলেরই একাধিক গোষ্ঠী। সাঁকরাইলের বিধায়ক শীতল সর্দারের ডাকা দলীয় সম্মেলনে হাজির হওয়ার সময় বিধায়কের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মিছিলের মধ্যে পড়ে যান হাওড়ার দলীয় সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর ক্ষোভ গোপন করেননি। শীতলবাবুর সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই সাংসদ হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ‘‘এইভাবে একই দলের একটা অংশ মিছিল করবে, অন্য অংশ সম্মেলন করবে। এমনটা চলতে পারে না। আমি দলনেত্রীর কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট দেব।’’ নির্মলের মতোই শেষ হাসি হেসেছেন গুলশন এবং শীতল। দু’জনেরই দাবি, উন্নয়ন এবং আদর্শ মেনে চলার কারণেই তাঁদের উপরে ফের আস্থা রেখেছেন দলনেত্রী। সাঁকরাইলে বিধায়কের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর এক নেতার আক্ষেপ, ‘‘নিচুতলার কর্মীদের মতকে গুরুত্বই দেওয়া হল না। এর ফলে এই সব কর্মীদের মাঠে নামানো মুশকিল হবে।’’ একই আক্ষেপ গুলশনের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর গলাতেও।
২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকায় আমতা আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়েছিল তৃণমূল। জিতেছিলেন অসিত মিত্র। এ বার আর জোট নেই। সেই কারণে এই আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। প্রার্থী করা হয়েছে ব্যায়ামবীর তুষার শীলকে। স্থানীয় কাউকে না নিয়ে বাইরে থেকে প্রার্থী আনায় এখানেও হতাশ দলীয় কর্মীদের একাংশ।