এক সপ্তাহের ব্যবধানে শ্রীরামপুরে ফের একটি চটকলের কাজ বন্ধ হল।
কাঁচা পাটের অভাবের কারণে কর্তৃপক্ষ কাজের দিন কমানোয় মেনে নিতে পারেননি ইন্ডিয়া চটকলের শ্রমিকেরা। গত রবিবার শ্রমিক অসন্তোষকেই কারণ হিসেবে দেখিয়ে কাজ বন্ধের নোটিস পড়েছিল ওই চটকলে। এ বার কাঁচা পাটের অভাবকেই কারণ হিসেবে দেখিয়ে শনিবার ওয়েলিংটন চটকল কর্তৃপক্ষ ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলালেন। ফলে, বিপাকে পড়লেন সেখানকার প্রায় চার হাজার শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন। ভোটের মুখে পর পর দু’টি চটকলে এ ভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল। এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছে তারা।
শ্রীরামপুরের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার অমল মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে কর্তৃপক্ষ চটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। আগামী বুধবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’
ওয়েলিংটন চটকল কর্তৃপক্ষের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই পর্যাপ্ত পরিমাণে উন্নত মানের কাঁচা পাট মিলছে না। তা ছাড়া, শ্রমিকদের একাংশের জন্য উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। সে জন্য চটকলে কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এ কথা মানতে চায়নি শ্রমিক সংগঠনগুলি।
শ্রীরামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে গঙ্গার ধারে তিনটি চটকল রয়েছে। তার মধ্যে দু’টিতেই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনে মালিকপক্ষকেই দায়ী করছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। শনিবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে ওয়েলিংটনের শ্রমিকেরা চটকলের গেটে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি দেখে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে শ্রম আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অবিলম্বে চটকল খুলতে সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেন তাঁরা।
শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ শ্রমিক সঙ্কোচনের রাস্তা খুঁজছেন। তাই মাঝেমধ্যে শিল্পে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে চটকল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। ওয়েলিংটনের সিটু নেতা মহম্মদ নাসিম আহমেদের ক্ষোভ, ‘‘কারখানায় কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা মালিকপক্ষের। ইচ্ছাকৃত ভাবে শ্রমিকদের ঘাড়ে অন্যায় ভাবে দায় চাপিয়ে চটকল বন্ধ করলেন ওঁরা।’’ এসইউসির শ্রমিক সংগঠনের নেতা দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্যের আড়াই লক্ষ পাটচাষি, শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবার এই শিল্পের উপরে নির্ভর। কিন্তু শিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য কারও ভাবনা নেই। সরকারের ইচ্ছাকৃত উদাসীনতাতেই মালিকপক্ষ যা খুশি তাই করছেন।’’ আইএনটিটিইউসি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক অন্বয় চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘অনেক দিন ধরেই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছেন মালিকপক্ষ। কিন্তু শ্রমিক অসন্তোষের ভয়ে তা পারছেন না। সে জন্যই অচলাবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। ভোটের মুখে সরকারকে হেয় করতে চটকলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’