প্রতিবাদ: বিক্ষুব্ধ স্থানীয় মহিলারা । নিজস্ব চিত্র
পুলিশ-প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কাজ হয়নি। এই অভিযোগ তুলে কয়েকশো মহিলা মিলে চোলাইয়ের ঠেক ভাঙচুর করলেন। বুধবার রাতে হুগলির পান্ডুয়া ব্লকের খন্যানের নৈপুকুর পাড়ের ঘটনা। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তবে পুলিশ আসার আগেই পালিয়ে যায় চোলাই বিক্রেতারা।
ওই এলাকার মহিলাদের অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নৈপুকুর পাড়ের ৬-৭টি বাড়ি থেকে চোলাই বিক্রি করা হয়। পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালায় বটে কিন্তু সেই অভিযানের কয়েক দিন পরেই ফের চোলাই বিক্রি শুরু হয়। মৌসুমি ক্ষেত্রপাল, চৈতালি হাজরা, গৌরী ক্ষেত্রপাল-সহ স্থানীয় মহিলাদের অভিযোগ, অন্য পাড়ার লোক এমনকি স্কুল পড়ুয়ারাও মদের আসরে আসে। পাড়ায় সুস্থ ভাবে বাঁচাই দায় হয়ে গিয়েছে। কয়েক মাস আগে এই বিষয়ে পান্ডুয়া থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছিলেন তাঁরা। বুধবার ফের অভিযোগ করেন। তবে এ বার আর পুলিশের উপরে ভরসা করেননি। থানা থেকেই তাঁরা সোজা চোলাইয়ের ঠেক ভাঙতে চলে যান। লাঠি, ঝাটা, টর্চ হাতে নিয়ে ভিড় করতে থাকেন মহিলারা। স্লোগান ওঠে ‘অশান্তি নয়, শান্তি চাই’, ‘গ্রামে মদ বিক্রি চলবে না’। ভাঙা হয় তিনটি ঠেক।
পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, খন্যান নৈপুকুর পাড়ে যেখানে চোলাইয়ের ঠেক রয়েছে তার পাশেই তৃণমূল পরিচালিত পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চম্পা হাজরার বাপেরবাড়ি। চম্পাদেবী বিষয়টি জানলেও ব্যবস্থা নেননি। নৈপুকুর পাড়ের বাসিন্দা পূর্নিমা ক্ষেত্রপালের ক্ষোভ, ‘‘স্বামী ঘরে রাখা চাল বিক্রি করে মদ কিনে খায়। বেশিরভাগ দিন কাজে যায় না। আমাকে মাঠে কাজ করতে হয়। গ্রামের অনেক মহিলারই আমার মতো অবস্থা। দিনের পর দিন প্রশাসনকে জানালেও কোনও কাজ হয়নি।’’ চম্পাদেবীর অবশ্য পাল্টা দাবি, তাঁর বাপের বাড়ি নৈপুকুর পাড়ে হলেও সেখানে চোলাইয়ের ব্যবসা চলে বলে তিনি জানেন না। বুধবার রাতে মহিলারা যে চোলাইয়ের ঠেকে ভাঙচুর করেছেন সেটিও তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন।
ওই মহিলারা জানিয়েছেন, ট্রেন, বাস, মোটরবাইকে করে গ্রামে চোলাই আসে। প্রতি দিন ভোর পাঁচটা থেকে ন’টার মধ্যে ফলের পেটি করে চোলাই পৌঁছে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় স্কুল ব্যাগ। সেক্ষেত্রে পড়ুয়া পিছু ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। অভিযোগ, পান্ডুয়ার আবগারি দফতরের কর্তারা চোলাই বিক্রেতাদের কাছে মাঝেমধ্যে এলেও ব্যবসা বন্ধ হয় না।
যদিও গ্রামবাসীদের তোলা অভিযোগ মানেননি আবগারি দফতর এবং পুলিশ। পান্ডুয়া আবগারি দফতরের ওসি শুভময় বিশ্বাসের দাবি, ‘‘প্রতি মাসেই চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চলে। চোলাই বিক্রেতাদের ধরা হয়।’’ হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা জানান, চোলাইয়ে বিরুদ্ধে রুটিন অভিযান চলে। পান্ডুয়া থানা এলাকায় প্রতি মাসেই ৩০০ থেকে ৩৫০ লিটার চোলাই নষ্ট করা হয়।