পকসো মামলার বিচার করবেন কে?

উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে শ্যামপুর, বাগনান, আমতা, উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া, উদয়নারায়ণপুর এবং জয়পুর— এই সাত থানা এলাকা থেকে মাসে গড়ে ১০টি করে পকসো মামলা আসে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

গত ছ’মাসে হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় অন্তত ৬০টি শিশু নির্যাতন বা শিশু ধর্ষণ‌ের অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। কিন্তু বিচার হবে কোথায়? উলুবেড়িয়া ‘পকসো’ আদালতে বিচারকই নেই।

Advertisement

শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্যই তৈরি হয়েছে পকসো (প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আদালত। উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে পকসো মামলাগুলির বিচারের দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (১)। ছ’মাস আগে তিনি বদলি হয়ে যান। তাঁর জায়গায় কেউ বহাল হননি। আপাতত পকসো আদালতের আংশিক দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক (২)। ফলে, জরুরি ভিত্তিতে তিনি শুধু ধৃতদের জামিনের বিষয়টিই দেখেন। মাম‌লার মূল শুনানি, চার্জশিট পেশের পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন— এইসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে গিয়েছে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (১)-এর অভাবে। ফলে, বিচার প্রক্রিয়া যেমন বিলম্বিত হচ্ছে, তেমনই কার্যত বিনা বিচারে বহু অভিযুক্ত হাজতবাস করছেন।

গত শনিবার হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের ক্রাইম কনফারেন্সে পকসো আদালতে বিচারক না-থাকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। উলুবেড়িয়া মহকুমার প্রতিটি থানার আইসি-ওসিরা বিচারক না-থাকার জন্য নানা অসুবিধা নিয়ে সরব হন বলে গ্রামীণ জেলা পুলিশ সূত্রের খবর। অবিলম্বে পকসো আদালতে বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরাও। ‘উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালত ক্রিমিন্যাল বার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক খায়রুল বাশার বলেন, ‘‘পকসো-র মতো গুরুত্বপূর্ণ আদালতে ছ’মাস ধরে বিচারক নেই, এটা অভাবনীয়। আমরা কলকাতা হাইকোর্ট-সহ বিভিন্ন মহলে বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছি।’’

Advertisement

উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে শ্যামপুর, বাগনান, আমতা, উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া, উদয়নারায়ণপুর এবং জয়পুর— এই সাত থানা এলাকা থেকে মাসে গড়ে ১০টি করে পকসো মামলা আসে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সেগুলির কাজ ছাড়াও পুরনো মামলাগুলিরও চার্জগঠন, শুনানি—এইসব নিয়মিত হওয়ার কথা পকসো আদালতে। কিন্তু বাছাই করা কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নতুন মামলার জামিনের শুনানি ছাড়া বাকি সব কাজই বন্ধ। তা-ও জামিনের শুনানিতেও বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য, বহু মামলায় অভিযুক্তকে জেল হাজতে রেখে শুনানি চলছে। কিন্তু বিচারক না-থাকায় দিনের পর দিন শুনানি হচ্ছে না। ফলে, অভিযুক্তদের হাজতবাসের মেয়াদ বেড়ে চলেছে। এই

অবস্থায় অভিযুক্তেরা যদি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানায় তা হলে তাদের জামিন পেতে অসুবিধা না-ও হতে পারে। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, হাইকোর্ট বিচারক না-থাকা সংক্রান্ত পুলিশের বক্তব্য না-ও মানতে পারে। শুধু তাই নয়, নিপীড়িত নাবালিকার পরিবারগুলিও এই অবস্থায় বিরক্তি প্রকাশ করছে। তাঁদের বক্তব্য, দিনের পর দিন তাঁদের আদালতে আসতে হচ্ছে আর ফিরে যেতে হচ্ছে। সুবিচার পাচ্ছেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement