শহরের বর্জ্যে বুজছে জলাভূমিও

এক দিকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, আর এক দিকে দিল্লি রোড। একটি জাতীয় সড়ক অন্যটি রাজ্য সড়ক। মাঝখানে এক বিরাট জলাভূমি। যদিও সেখানে জলের দেখা নেই। বরং উপচে পড়ে আবর্জনা— পুরসভার জঞ্জাল ফেলার ঠিকানা।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

ডানকুনি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৯
Share:

দূষণ: শহরের ছবি এখন এমনই। ছবি: দীপঙ্কর দে

এক দিকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, আর এক দিকে দিল্লি রোড। একটি জাতীয় সড়ক অন্যটি রাজ্য সড়ক। মাঝখানে এক বিরাট জলাভূমি। যদিও সেখানে জলের দেখা নেই। বরং উপচে পড়ে আবর্জনা— পুরসভার জঞ্জাল ফেলার ঠিকানা। দুর্গন্ধের চোটে নাকে রুমাল চেপে যাতায়াত করেন এলাকার মানুষ। অভিযোগ, পুরসভার কোনও হেলদোল নেই।

Advertisement

যদিও সে কথা মানতে নারাজ পুর-কর্তৃপক্ষ। ডানকুনির পুরপ্রধান হাসিনা শবনম বলেন, ‘‘এক সময় পুরসভা থেকেও আবর্জনা ফেলা হত ওখানে। এখন আর হয় না।’’

তবে পরিস্থিতি যে ভাল নয়, তা বোঝা যায় টিএন মুখার্জি রোড দিয়ে গেলেই। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে এবং দিল্লি রোড সংযোগকারী টিএন মুখার্জি রোডের ধারেই রয়েছে ওই জলা। অনেকখানি বুজে গিয়েছে আবর্জনার ঠেলায়। স্তূপাকার হয়ে থাকে নোংরা। বাকিটা পানায় ভর্তি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলে মিশে আছে নানা রাসায়নিকও।

Advertisement

ওই রাস্তার ধারেই রয়েছে একাধিক গাড়ি মেরামতির দোকান, গ্যারাজ। সেখান থেকে নানা ধরনের তরল বর্জ্য ফেলা হয় জলায়। হাইওয়েগুলির ধারে ধারে রয়েছে বেশ কিছু খাবার দোকান, হোটেল। সেখান থেকেও আবর্জনা ফেলা হয়। অভিযোগ, ডানকুনি পুর এলাকা থেকে যে আবর্জনা সংগ্রহ করেন সাফাই কর্মীরা— তা-ও ফেলা হয় ওই জলাতেই। ফলে আবর্জনার স্তূপে রোজই ভিড় জমায় কাক, কুকুর। সঙ্গে আছে শুয়োর। নোংরা ছড়িয়ে পড়ে এ দিক সে দিক। শুকনো আবর্জনা জলের সংস্পর্শ এসে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ ভাবে রোগ ছড়াতে বাধ্য।

ডানকুনি হাউজিং এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কলকাতায় দেখছি, জলা সংরক্ষণ করে সৌন্দার্যায়ন করছে সরকার। আর আমাদের এখানে পুরসভাই নোংরা, আর্বজনা ফেলে বুজিয়ে দিচ্ছে অত বড় একটা জলা। এ কেমন বিচার!’’ ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা উদয় দে বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি থেকে তো রোজ সকালে আবর্জনা নিয়ে যান সাফাই কর্মীরা। আমরা ভাবছি এলাকা পরিষ্কার থাকছে। কিন্তু বিপদ তো অন্যত্র।’’

পুরপ্রধান হাসিনা শবনম যদিও দাবি করেছেন, ‘‘পুরসভা থেকে একটু দূরে আমরা সাত বিঘা জমি কিনেছি। এখন সেখানেই ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করেছি। সেই সঙ্গে আমরা বৈদ্যবাটীর জঞ্জাল নিষ্কাশন প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার আবেদনও জানিয়েছি।’’ প্রসঙ্গত, ভারত-জাপান যৌথ উদ্যোগে বৈদ্যবাটীতে তৈরি হয়েছে বর্জ্যকে পরিবেশ সহায়ক করে কাজে লাগানোর প্রকল্প। রাজ্যে একমাত্র কেন্দ্র এটি।

তবে ডানকুনির বাসিন্দারা মোটেও সন্তুষ্ট নন পুর উদ্যোগে। তাঁদের দাবি, শুধু টিএন মুখার্জি রোড নয়। এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় একই ছবি। নিকাশি নালাগুলি উপচে পড়ে। হাউজিং এলাকার মতো এলাকাতেও যেখানে সেখানে পড়ে থাকে আবর্জনা। অথচ, রাজ্য সরকার ডানকুনিকে শিল্প নগরী হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া। বাম আমলেই চালু হয়েছিল দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। তারপর থেকে ছোট ছোট বহু শিল্পই গড়ে উঠেছে এই এলাকায়। রাস্তার উন্নতি হওয়ায় কলকাতা থেকে দূরত্ব কমে গিয়েছে একধাক্কায় অনেকখানি। খুব কাছে মুম্বই রোড। দমদম এয়ারপোর্টের দূরত্বও বেশি নয়। ফলে কদর বেড়েছে ডানকুনির। লাফিয়ে বেড়েছে জমির দাম। কিন্তু শহরের নিকাশি বা বর্জ্য নিয়ে ভাবনাই নেই পুরসভার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement