এ বার কাটমানি নেওয়ার নালিশ হাওড়ার স্কুলে

শ্রেণিকক্ষ তৈরিতে দুর্নীতি, বিক্ষোভ আমতায়

যে স্কুল নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেই দেওড়া প্রাথমিক স্কুল, আমতা-১ ব্লকের মধ্যে বৃহত্তম। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার এই স্কুলে সাড়ে তিনশো ছাত্র-ছাত্রী পড়ে। অধিকাংশ পড়ুয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা ১০ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আমতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০০:২৬
Share:

প্রতিবাদ: দুর্নীতির অভিযোগে স্মারকলিপি বিডিওকে। নিজস্ব চিত্র।

শ্রেণিকক্ষ তৈরিতে দুর্নীতি ও কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। সোমবার দুপুরে হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের ঘটনা। বিডিওর তরফে তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলে বিক্ষোভ ওঠে।

Advertisement

যে স্কুল নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেই দেওড়া প্রাথমিক স্কুল, আমতা-১ ব্লকের মধ্যে বৃহত্তম। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার এই স্কুলে সাড়ে তিনশো ছাত্র-ছাত্রী পড়ে। অধিকাংশ পড়ুয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা ১০ জন।

স্কুল সূত্রে খবর, গত আর্থিক বছরে এমএসডিপি (মাল্টি সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) প্রকল্পে এই স্কুলে শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য ৩২ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। এমএসডিপি প্রকল্পটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার জন্যই। শ্রেণিকক্ষের সঙ্গে শৌচাগার এবং বিদ্যুৎ সংযোগের যাবতীয় ব্যবস্থাও করে দেওয়ার কথা। পুরো কাজটি শেষ করার কথা ছিল ৭০ দিনের মধ্যে।

Advertisement

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কাজটি অসম্পূর্ণ রেখে ঠিকাদার সংস্থা চলে গিয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা হয়নি। কাজটি করতে গিয়ে স্কুলের পুরনো শৌচাগারের কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে সমস্যায় পড়েছে ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক শিক্ষিকারা। শুধু তাই নয়, পানীয় জলের দুটি পাম্প ছিল। শ্রেণিকক্ষ বানাতে গিয়ে একটি পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মাত্র একটি পাম্পের জলে মিড ডে মিল-সহ যাবতীয় কাজ করতে হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক রবিয়াল হক বলেন, ‘‘বারবার ব‌লা সত্বেও ঠিকাদার সংস্থা আমাদের কিছু জানায়নি। বাকি কাজ কবে হবে বা আদৌ তা হবে কি না সে বিষয়ে ব্লক এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রশ্ন করে উত্তর মেলেনি। অভিভাবকেরা এসে আমাদের কাছে জানতে চাইছেন কবে কাজ শেষ হবে। কিন্তু সেই উত্তর আমরাও জানি না।’’

এ দিন গ্রামবাসী এবং অভিভাবকেরা বিডিও অফিসের গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ঘন্টাখানেক বিক্ষোভ চলার পরে তাঁরা বিডিও-র সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেন। অভিভাবকদের মধ্যে মুস্তাক মল্লিক বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় শ্রেণিকক্ষ করতে গিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা ‘কাটমানি’ খেয়েছেন। যত টাকা বরাদ্দ হয়েছে সেই অনুযায়ী কাজ হয়নি।’’ বিডিও লোকনাথ সরকার বলেন, ‘‘এর আগে শিক্ষকদের তরফ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ দিন গ্রামবাসীরা এসেছিলেন। দুই পক্ষই শ্রেণীকক্ষ নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’’

আমতা-১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি ধনঞ্জয় বাকুলি বলেন, ‘‘কাজটি করা হচ্ছে বিডিওর তত্ত্বাবধানে। এখানে পঞ্চায়েত সমিতির কোনও ভূমিকা নেই।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে।’’

এ দিকে এ দিনের বিক্ষোভের পরেই শাসক দলের কিছু নেতা শিক্ষকদের হুমকি দিচ্ছেন বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুল‌ের শিক্ষক তথা বিজেপি প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য নেতা পিন্টু পাড়ুইয়ের অভিযোগ, ‘‘আমতা-১ ব্লকে এমএসডিপি প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই শিক্ষকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা খুব শীঘ্রই প্রতিবাদে আন্দোলনে নামব।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে ধনঞ্জয় বাকুলি বলেন, ‘‘শিক্ষকদের কেউ হুমকি দেয়নি। তবে এটাও ঠিক, শিক্ষকদের একাংশ অভিভাবকদের উস্কানি দিচ্ছেন। শিক্ষকেরা চেয়েছিলেন, সব টাকা তাঁদের হাতে দেওয়া হোক। তাঁরাই কাজটি করবেন। কিন্তু এটা নিয়ম নয়। তাঁদের এই গোঁ ধরে বসে থাকার জন্য কাজটি শুরু করতে অনেক দেরি হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement