ধূলাগড়ি পাইকারি বাজার

খুচরো-আকালে রোজ ক্ষতি প্রায় ৫০ লক্ষ

খুচরো সমস্যায় ধরাশায়ী হাওড়ার ধূলাগড়ি পাইকারি সব্জিবাজার। এই বাজার থেকে পাইকারি সব্জি কিনে নিয়ে যান খুচরো ব্যবসায়ীরা। কিন্তু নোট বাতিল এবং সেই ঘাটতি মেটাতে পর্যাপ্ত নগদের জোগান না থাকায় বিক্রি কমে গিয়েছে খুচরো সব্জি ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

নুরুল আবসার

সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৩
Share:

ছবি: সুব্রত জানা।

খুচরো সমস্যায় ধরাশায়ী হাওড়ার ধূলাগড়ি পাইকারি সব্জিবাজার।

Advertisement

এই বাজার থেকে পাইকারি সব্জি কিনে নিয়ে যান খুচরো ব্যবসায়ীরা। কিন্তু নোট বাতিল এবং সেই ঘাটতি মেটাতে পর্যাপ্ত নগদের জোগান না থাকায় বিক্রি কমে গিয়েছে খুচরো সব্জি ব্যবসায়ীদের। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ধূলাগড়ি সব্জি বাজারে। রোজ প্রায় পাঁচশো পাইকারি ব্যবসায়ী বসেন। বাজার সূত্রে খবর, দৈনিক প্রায় এক কোটি টাকার লেনদেন হতো এখানে। নোটের আকাল তা এক ধাক্কায় নামিয়ে এনেছে দৈনিক ৪০-৪৫ লক্ষ টাকায়।

শনিবার বিকেলে ধূলাগড়ি বাজারে গিয়ে দেখা গেল, পুরনো এক হাজার টাকার একটি নোট নিয়ে ব্যবসায়ীদের দরজায় দরজায় ঘুরছেন রৌশেনারা বেগম। ডোমজুড়ের মাকড়দহ বাজারে সব্জি বিক্রি করেন তিনি। পাইকারি সবজি কিনতে এসেছিলেন এখানে। শুক্রবার সকালে এক খরিদ্দার তাঁকে এক হাজার টাকার নোটটি দিয়ে দুশো টাকার সব্জি কেনেন। রৌশেনারা বলেন, ‘‘ডোমজুড়ে একটি কারখানায় কাজ করেন ওই ব্যক্তি। ভিনদেশের মানুষ। এক হাজার নোটেই বেতন পেয়েছেন। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে নোট ভাঙাতে পারেননি। আমার কাছে এসে বললেন ঘরে এক দানা সব্জি নেই। বাধ্য হয়ে এক হাজার টাকার নোট নিই। বাকি টাকা তাঁকে ফেরত দিই। কিন্তু এখন আমি পড়েছি ফ্যাসাদে।’’

Advertisement

শুক্রবার তো বটেই, শনিবারেও ধূলাগড়ি বাজারে তাঁর কাছ থেকে কেউ ওই এক হাজার টাকার নোট নিতে চাননি। ফলে আর সব্জি কেনা হয়নি রৌশেনারার। তাঁর কথায়, ‘‘এমনিতেই খুচরো সমস্যায় পড়ে রোজের বিক্রি কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তার পর মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো হাজির এই এক হাজার নোট।’’ রানিহাটি থেকে এসেছিলেন সুজয় সর্দার। তিনি বলেন, খুচরো টাকা নেই। সবাই এক হাজার, পাঁচশো টাকার নোট ধরাচ্ছেন। ফলে খরিদ্দার ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’’ দৈনিক ১৪ হাজার টাকা করে সব্জি বিক্রি করতেন সুজয়। এখন সেই বিক্রি ঠেকেছে পাঁচ হাজারে।

সব্জিবাজারে ট্রাক ঢুকতে হলে যেখানে টোল দিতে হয় সেই ধূলাগড়ি লজিস্টিক সেন্টার (ট্রাক টার্মিনাল)–এর ম্যানেজার মানিক রায় বলেন, ‘‘সব্জিবাজারে গড়ে দৈনিক গড়ে ২৫০টি ট্রাক এবং মিনিট্রাক ঢোকে। কিন্তু কয়েকদিনে তার সংখ্যা অর্ধেক হয়েছে। এর থেকেই বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।’’

রাজ্যে সব্জির পাইকারি বাজার হিসাবে কলকাতার কোলে মার্কেটের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে পাল্লা দিচ্ছে ধূলাগড়ি। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা এমনকী ভিন রাজ্য থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানে এসে সব্জি বিক্রি করেন। নাসিক থেকে আসে পেঁয়াজ। বেঙ্গালুরু থেকে আসে টোম্যাটো। খুচরো ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে তা কিনে বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু নোট বাতিলের জেরে খুচরো ব্যবসায়ীদের বিক্রিবাটা কমে যাওয়ায় বসে গিয়েছে ধূলাগড়ি সবজি বাজার।

নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত শুধু যে সব্জি বাজারের ব্যবসার ক্ষতি করেছে তা নয়, আঘাত এনেছে এই ব্যবসায় জড়িত বহু মানুষের রুটি রুজিতেও। এখান থেকে ছোট ছোট গাড়িতে সব্জি নিয়ে বিভিন্ন বাজারে চলে যেতেন খুচরো ব্যবসায়ীরা। কিন্তু শনিবার দেখা গেল একের পর গাড়ি দাঁড়িয়ে। ভাড়া জোটেনি। সেখ ওয়াসিম, রাজা চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু পাত্রের মতো গাড়ির মালিকেরা বলেন, ‘‘খুচরো ব্যবসায়ীরা তো আসছেই না। কাদের নিয়ে যাব। নোটের সমস্যার আগে রোজ গড়ে আটশো টাকা রোজগার করতাম। এখন আড়াইশো টাকা রোজগার করতেই হিমসিম খাচ্ছি। এভাবে চললে গাড়ি বেচে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’’

চোখেমুখে আতঙ্ক ফুটে ওঠে ওয়াসিমদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement