প্রতিবাদ: বিক্ষোভ কাগজ কলের শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র
আর ক’দিন বাদেই পুজো। তার আগে গ্রামীণ হাওড়ার শিল্প-চিত্রে কিছুটা ধাক্কা এল। বাগনানের বরুন্দায় একটি কাগজ-কারখানায় বর্ধিত বেতন এবং বোনাসের দাবিতে শ্রমিকেরা বুধবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করলেন। তার আগে মঙ্গলবার থেকে সাঁকরাইলের ধূলাগড়ির বেসরকারি শিল্পতালুকে একটি বাণিজ্যিক সংস্থার গুদাম বন্ধ হয়ে গেল শ্রমিকদের সেই বোনাসের দাবিকে কেন্দ্র করেই।
বাগনানের কাগজ-কলটিতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ২২০০ শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের অভিযোগ, ন্যায্য বেতন দেওয়া হয় না। ছুটি মেলে না। বোনাসও পর্যাপ্ত নয়। আন্দোলনের জন্য শ্রমিকেরা ইতিমধ্যে ‘শ্রমিক কল্যাণ মঞ্চ’ তৈরি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দৈনিক মাত্র ১৯২ টাকা বেতন মেলে। এই বেতন ৩৫০ টাকা করা এবং সেই নিরিখে এক মাসের বেতন বোনাস হিসাবে দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের কোনও দাবিই কর্তৃপক্ষ মানতে নারাজ। সেই কারণেই বুধবার সকাল থেকে তাঁরা কর্মবিরতি শুরু করেন।
বিকেলে বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেন আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বিধায়ক জানান, আজ, বৃহস্পতিবার তিনি কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। শ্রমিকদের বক্তব্য, বিধায়কের মধ্যস্থতায় যদি সমস্যা না-মেটে তা হলে তাঁরা অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতি পালন করবেন। কর্তৃপক্ষের তরফে এ নিয়ে কেউ কথা বলতে চাননি।
ধূলাগড়ির ওই বাণিজ্যিক সংস্থার গুদামে শ্রমিকদের বোনাসের দাবি ঘিরে টানাপড়েন চলচিল ক’দিন ধরেই। এখানে প্রায় দেড়োশ স্থায়ী শ্রমিক এবং ১২২ জন ঠিকা শ্রমিক রয়েছেন। আন্দোলনে নেমেছেন মূলত ঠিকা শ্রমিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, গত বছর মাত্র পাঁচশো টাকা করে বোনাস দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের দাবি, যে ঠিকা সংস্থার হয়ে তাঁরা এখানে কাজ করেন, সেই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল এ বছর বোনাসের হার বাড়ানো হবে। এক মাসের বেতনের সম পরিমাণ বোনাস মিলবে। কিন্তু ক’দিন আগে ওই ঠিকা সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়, এ বছর বোনাসই দেওয়া হবে না। ঠিকা সংস্থার সঙ্গে শ্রমিকদের এই টানাপড়েনের মাঝেই মঙ্গলবার গুদামটি বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। ঠিকা সংস্থার এক কর্তা জানান, গুদামটির মালিক যে বাণিজ্যিক সংস্থা, তাদের কাছে তাঁরা শ্রমিকদের বোনাস দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করছিলেন।
বোনাস তো মিললই না, উল্টে গুদামও বন্ধ হয়ে গেল। পুজোর মুখে বিপাকে পড়লেন ওই গুদামের সব শ্রমিকই। বাণিজ্যিক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।