মৃত সন্ন্যাসী সামন্ত (উপরে) এবং নিমাই জানা (নীচে)। নিজস্ব চিত্র।
মদের ঠেকে এক সঙ্গে চোলাই খাওয়ার পরে দুই গুণিনের মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ উঠল আর এক গুণিনের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাতে হুগলির খানাকুলের কাগনান সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদীর ধারে টুঙ্গিরঘাট এলাকার একটি ঠেকে নিমাই জানা (৬০), সন্ন্যাসী সামন্ত (৫৫) এবং মণিশঙ্কর গুছাইত নামে ওই তিন গুণিন চোলাই খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান নিমাইবাবু এবং সন্ন্যাসীবাবু। এর পরেই মণিশঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে পেশাগত ভাবে এলাকায় একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের জন্য মদে বিষ মিশিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। সন্ন্যাসীবাবুর ভাইপো সনাতন সামন্ত পুলিশের কাছে ওই অভিযোগ দায়ের করেন। মণিশঙ্করবাবু আরামবাগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই এলাকায় চোলাই সরবরাহের অভিযোগে পুলিশ মন্টু সানকি নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, ধৃতের কাছে থাকা সমস্ত চোলাই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। টুঙ্গিরঘাট এলাকা থেকে মদের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষায় পাঠানো হচ্ছে। ধৃতকে শনিবার আরামবাগ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
নিমাইবাবু এবং মণিশঙ্করবাবু কাগনানের বাসিন্দা। সন্ন্যাসীবাবুর বাড়ি স্থানীয় ঠাকুরানিচকে। তাঁর মেয়ে অনুশ্রী চৌহানের অভিযোগ, “মদের সঙ্গে বিষ জাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছে বাবাকে। নইলে আমি তো ছেলেবেলা থেকেই বাবাকে প্রায়ই চোলাই খেতে দেখছি।” একই রকম অভিযোগ শোনা গিয়েছে মৃত নিমাইবাবুর জামাই উত্তম পরামানিকের মুখেও।
পক্ষান্তরে, অভিযোগ উড়িয়ে চিকিৎসাধীন মণিশঙ্করবাবুর দাবি, ‘‘গুরুদেবই (নিমাইবাবু) তো মদ খেতে ডেকেছিলেন। তিনিই তিন জনের পাত্রে মদ ঢেলে দিয়েছিলেন। মুখে দেওয়ার পরেই বমি শুরু হল। কোনও মতে বাড়ি ফিরে জ্ঞান হারাই। তার পরে তো দেখছি হাসপাতালে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিমাইবাবু ছিলেন বাকি দু’জনের ‘গুরুদেব’। ওই রাতে তিন জনে এক সঙ্গেই চোলাই খাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিন জনেই চিৎকার করে ছটফট করতে থাকেন। মণিশঙ্করবাবু কোনও মতে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকেন। স্থানীয়েরাই পুলিশে খবর দেন। তাঁদের অনেকেরই সন্দেহ মদের সঙ্গে কিছু মেশানো হয়েছিল। ওই ঠেকে সে দিন আরও কয়েক জনও চোলাই খান। তাঁদের অবশ্য কিছু হয়নি বলে ওই এলাকার লোকজন জানান।