খালনা যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয় এবং খালনা বালিকা বিদ্যামন্দির। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যবধান মেরেকেটে এক কিলোমিটারের। কিন্তু হাওড়ার জয়পুরের দুই স্কুলের অবস্থার ফারকটা আসমান-জমিন!
খালনা যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা সাকুল্যে ২৬। শিক্ষিকা আট জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আছেন দু’জন। করণিক এক জন। অন্যদিকে, খালনা বালিকা বিদ্যামন্দিরে প্রায় ৯০০ ছাত্রী। কিন্তু শিক্ষিকা মাত্র ১৩! করণিক নেই। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী মাত্র একজন!
অথচ, যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়ে যাতে ছাত্রীদের ভর্তি করানো হয়, তার জন্য চেষ্টা কম হয়নি। খালনা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান গৌতম রায়ের দাবি, এক সময়ে মাইকে প্রচার করা হয়েছে। স্কুলে আসার পথে খালে সেতু করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্রী আসেনি। গ্রামবাসীদের একাংশ মনে করেন, ওই স্কুলে প্রথম দিকে শুধু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো। খালনা বালিকা বিদ্যামন্দির প্রথম থেকেই মাধ্যমিক স্তরের। পঠনপাঠনের মানও উন্নত। ফলে, সেখানেই ছাত্রীদের ভিড় বেশি। তা ছাড়া, কেউ কেউ যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়কে নিয়ে রাজনীতি করারও অভিযোগ তোলেন।
অভিভাবকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী এবং ছাত্রীদের বালিকা বিদ্যামন্দিরে আনার কথা ভাবতে পারে শিক্ষা দফতর। প্রায় একই বক্তব্য যোগমায়ার শিক্ষিকাদেরও। তাঁরা বদলির দাবিও তুলেছেন। খালনা বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা সেনগুপ্ত জানান, শিক্ষিকার অভাবে স্কুলের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। ‘কন্যাশ্রী’-সহ ছাত্রীদের জন্য নানা প্রকল্পের কাজেরও ব্যাঘাত ঘটছে করণিকের অভাবে। নিবেদিতাদেবী বলেন, ‘‘সব কিছু জেলা স্কুল পরিদর্শককে জানানো আছে। দেখা যাক, কী হয়।’’
জেলা স্কুল পরিদর্শক শান্তনু সিংহ বলেন, ‘‘যে স্কুলে একদম পড়ুয়া নেই, অথচ শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন, তাঁদের অন্য স্কুলে জুড়ে দেওয়া বা বদলির প্রস্তাব শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে।’’ খালনা বালিকা বিদ্যালয়ের অভাবগুলি ধীরে ধীরে পূরণেরও আশ্বাস দিয়েছেন শান্তনুবাবু।
খালনা যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৫ সালে। এক সময়ে এই স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০। পরে তা কমতে থাকে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। অথচ, তখনই ছাত্রীর সংখ্যা নেমে গিয়েছিল পঞ্চাশের নীচে। ওই বছর পর্যন্ত শিক্ষিকার সংখ্যা ছিল ১১ জন। পরে একজন বদলি হয়ে যান। একজন অবসর নেন। আরও একজন ব্যক্তিগত কারণে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। বাকি আট জন নিয়মিত স্কুলে আসেন। স্কুলটি রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান (আরএমএস)-এর অধীনে ‘স্পনসর্ড’ হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে দু’দফায় এক লক্ষ টাকা পেয়েছে। এ বছর নবম শ্রেণিতে কোনও ছাত্রীই নেই। কারণ, গত বছর অষ্টম শ্রেণির একমাত্র ছাত্রী পড়া ছেড়ে গিয়েছে। এখান থেকে এ বছর মাধ্যমিক দেবে মাত্র চার জন। প্রধান শিক্ষিকা মণিমঞ্জুষা সিংহের ক্ষোভ, ‘আমরা ছাত্রী সংগ্রহের জন্য বাড়ি বাড়ি যাই। কিন্তু অভিভাবকেরা মেয়েদের পাঠাতে চান না।’’ ওই ভবনেই চলে প্রাথমিক স্কুল। সেখানেও ছাত্রী কম।
খালনা বালিকা বিদ্যামন্দির তৈরি হয় ১৯৬৪ সালে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য লাইন পড়ে। এ বছর এখনও পর্যন্ত ১৭০ জন ছাত্রী পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের ক্ষোভ, শিক্ষিকাদের জন্য পদের সংখ্যা ১৭। কিন্তু ১৩ জনকে দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে। অঙ্কের শিক্ষক নেই। ইংরেজির শিক্ষকই নিচু শ্রেণিতে অঙ্কের ক্লাস নেন।