অসহায়: মুম্বই রোডে হেলমেট ছাড়াই বাইকে সওয়ার তিন স্কুলছাত্র। পুলিশ দর্শক। ফাইল ছবি
গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া তাদের কাজ। কিন্তু গাড়ির অভাব। তাই পিছিয়ে পড়ছে হাওড়া জেলা ট্র্যাফিক গার্ড। তাদের হাতে কাজ চালানোর জন্য আছে গুটিকয়েক মোটরবাইক আর জাতীয় সড়ক সংস্থার দেওয়া দু’টি গাড়ি। এই অবস্থায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে (মুম্বই রোড) যান নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান জেলা ট্র্যাফিক পুলিশ কর্তাদের একটা বড় অংশ।
হাওড়া জনবহুল জেলা। মুম্বই রোডে ডোমজুড়ের নিবড়া থেকে বাগনানের নাউপালা পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার অংশে যান নিয়ন্ত্রণ করতে হয় হাওড়া জেলা ট্র্যাফিক পুলিশকে। মুম্বই রোডে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ডোমজুড়ের নিবড়া, সাঁকরাইলের ধুলাগড়ি, উলুবেড়িয়া এবং বাগনানে চারটি ট্র্যাফিক গার্ড গঠন করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের আদলেই এই চারটি ট্র্যাফিক গার্ডের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ড-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, ফলে গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা থেকে শুরু করে মদ্যপান করে কেউ গাড়ি চালাচ্ছেন কিনা— সবই নজর রাখে ট্র্যাফিক গার্ড। ধুলাগড়িতে খোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম। এখান থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে ৫৫ কিলোমিটার অংশে যে সব সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে তার মাধ্যমে মুম্বই রোডে নজরদারি চালাতে
পারে পুলিশ।
কিন্তু গাড়ির ব্যাপারে ট্র্যাফিক বিভাগ পড়ে আছে মান্ধাতা আমলেই। চারটি ট্র্যাফিক গার্ড এলাকার কোথাও পুলিশের নিজস্ব গাড়ি নেই। ডিএসপি সদরের অধীনে রয়েছে নিবড়া ও ধুলাগড়ি ট্র্যাফিক গার্ড। ডিএসপি (গ্রামীণ)-এর অধীনে আছে উলুবেড়িয়া ও বাগনান। দু’জন ডিএসপি-র দায়িত্বে যে দু’টি গাড়ি আছে, সেগুলি জাতীয় সড়ক সংস্থা দিয়েছে। এ ছাড়া, তাঁদের রয়েছে মোট ১৫টি মোটরবাইক।
কিন্তু তা দিয়ে যে কাজ চলে না, তা স্বীকার করেছেন জেলা ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তাদেরই অনেকে। দফতর সূত্রের খবর, দীর্ঘ মুম্বই রোডে নজরদারি চালাতে আরও অন্তত চারটি গাড়ি এবং অতিরিক্ত ২০টি মোটরবাইক দরকার।
এ দিকে, নজরদারির অভাবে মুম্বই রোডে গাড়িগুলি যত্রতত্র লেন ভাঙছে। রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। স্থানীয় মানুষজনের দাবি, দুর্ঘটনার পরে কোনও গাড়ি পালানোর চেষ্টা করলে তাকে তাড়াও করতে পারছে না পুলিশ। পুলিশের সাফাই, গাড়ি নেই।
মুম্বই রোডে গাড়ির চাপ অনেক বেশি। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, এখানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে প্রতিদিন। অভিযোগ, ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটলেই যানজট ছাড়িয়ে যায় কয়েক কিলোমিটার। পুলিশ দ্রুত এলাকায় পৌঁছতেও পারে না, এমনটা জানিয়েছেন, এলাকার বাসিন্দা থেকে পুলিশ— সকলেই।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে রয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ। পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে অনেক গাড়ি চলে যায়। তাদের ধাওয়া করে ধরা যায় না গাড়ি বা মোটরবাইকের অভাবে। অনেক সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকেও গাড়ি আটকানোর জন্য ট্র্যাফিক পুলিশকে বলা হয়। কিন্তু সেই গাড়ি সিগন্যাল ছেড়ে বেরিয়ে গেলে তাকেও তাড়া করার উপায় থাকে না।
ট্র্যাফিক বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমাদের কাজ চলন্ত গাড়ির সঙ্গে। গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করতে হয় আমাদের। কিন্তু তার উপায় নেই। গাড়ি কোথায় যে গতির সঙ্গে পাল্লা দেব?’’
জেলা ট্র্যাফিক বিভাগের আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, মুম্বই রোডে যান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চারটি ট্র্যাফিক গার্ডের ক্ষমতা বা মর্যাদা কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের মতোই। কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হলেও গতির দিক থেকে হাওড়া পড়ে আছে অনেক পিছনে।
সমস্যার কথা অস্বীকার করছেন না গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, “রাজ্য পুলিশের কাছে সদর ও গ্রামীণ দু’টি বিভাগের জন্য গাড়ি ও মোটরবাইক চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ হলেই সমস্যা
মিটে যাবে।”