বেআইনি: পরপর এমনই মদের দোকান। —নিজস্ব চিত্র।
ছিল পাঁচটি মদের দোকান। শেষ তিন মাসে বেড়ে হয়েছে আটটি।
সাঁকরাইলের ধূলাগড়ি ট্রাক টার্মিনাসে এ ভাবে মদের দোকান বেড়ে চলায় আবগারি দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন স্থানীয়দের অনেকে।
২০০৬ সাল নাগাদ ওই বেসরকারি ট্রাক টার্মিনাসটি তৈরি হয়। সঙ্গে রয়েছে হাওড়া জেলার বৃহত্তম আনাজের পাইকারি বাজার। আশপাশে রয়েছে প্রচুর দোকান এবং হোটেল। ফলে, সব সময় ব্যস্ত ওই এলাকায় কী করে এত মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া হয়, সে প্রশ্ন তুলছেন টার্মিনাস কর্তৃপক্ষই। অভিযোগ, এত মদের দোকানের জন্য এলাকায় সমাজবিরোধী কাজকর্ম বাড়ছে। শ্রমিকদের অনেকে উপার্জনের বেশিরভাগ টাকা মদে খরচ করে দিচ্ছেন।
টার্মিনাস কর্তৃপক্ষের তরফে মানিক রায় বলেন, ‘‘আমরা আবগারি দফতরকে চিঠি লিখে আবেদন করেছি, এত বড় বাণিজ্যিক চত্বরে ঢালাও মদের লাইসেন্স না-দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারপরেও লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। কাকে লাইসেন্স দেওয়া হবে তা সরকারের নিজস্ব ব্যাপার। আমরা অনুরোধের বেশি কিছু করতে পারি না।’’
জেলা আবগারি দফতরের (গ্রামীণ) এক পদস্থ কর্তা জানান, সরকার এখন মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে উদার-নীতি নিয়েছে। ধর্মস্থান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে সেই এলাকায় লাইসেন্স দেওয়া হয় না। তার বাইরে যদি দোকানের মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিক থাকে, তা হলে লাইসেন্স না-দেওয়ার কোনও কারণ নেই। আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা পুলিশের দেখার কথা। গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, টার্মিনাস এলাকায় পুলিশের নিয়মিত নজরদারি চলে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ট্রাক টার্মিনাসে দু’ধরনের মদের দোকান হয়েছে। ‘অন শপ’ (যেখানে মদ কিনে খাওয়া যায়) এবং ‘অফ শপ’ (যেখান থেকে শুধু মদ কেনা যায়)। আনাজ-বাজারের শ্রমিক থেকে ব্যবসায়ী, ট্রাকের চালক-খালাসিদের ভিড় দু’ধনের দোকানেই লেগে থাকে। মত্ত অবস্থায় অনেকে মারামারিতেও জড়ান বলে অভিযোগ।
আনাজ-বাজারের শ্রমিক সংগঠনের নেতা মহম্মদ সিদ্দিক বলেন, ‘‘অত্যধিক মদের দোকানের ফলে আইনশৃঙ্খলাজনিত এবং সামাজিক সমস্যা তো হচ্ছেই। মহিলারাও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। অনেক শ্রমিক উপার্জনের টাকা মদে ওড়াচ্ছেন। বিষয়টি আমরা টার্মিনাস কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি।’’
টার্মিনাস কর্তৃপক্ষই দোকানঘর তৈরি করে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের মেয়াদে ‘লিজ’ দিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ীদের একাংশই মদের দোকানের জন্য আগে তাঁদের জানিয়ে লাইসেন্স নিতেন, কিন্তু এখন কেউ জানান না বলে টার্মিনাস কর্তৃপক্ষের দাবি। একইসঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, ধূলাগড়িতে একাধিক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। বড় কারখানা আছে। সরকারি-বেসরকারি শিল্পতালুক আছে। ফলে, ওই সব মহল থেকেও আইনশৃঙ্খলার অবনতির সমস্যার কথা তাঁদের কাছে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি মদের দোকানের লাইসেন্স পেয়েছেন এমন এক ব্যবসায়ী জানান, টার্মিনাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজে দোকান নেওয়ার শর্তে কোথাও বলা নেই যে মদের দোকান করা যাবে না।