শুক্রবার ফুরফুরা শরিফে ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে ফিরহাদ হাকিম ও মুকুল রায়। ছবি- দীপঙ্কর দে।
দলের অন্দরে এবং বাইরে ক্ষোভ-বিক্ষোভের আঁচ ছিলই। কিন্তু তাই বলে দল টিকিটই দেবে না, এমনটা বোধহয় ভাবতে পারননি বিধায়ক। সিপিএমের আমল থেকেই অনেক চড়াই-উতরাই দেখেছেন তিনি। হেরে গিয়েও মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। ডাঙায় সিপিএম আর নদীতে ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা--এই বাস্তবের বিরুদ্ধেই লড়ে গিয়েছেন পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান। তাই শুক্রবার নেত্রীর পছন্দের প্রার্থী তালিকায় নেতার ঠাঁই না পাওয়ার খবর সমর্থকদের কানে পৌঁছলে অনেকেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
যদিও বাদ যাওয়ার খবর পেয়েও এ দিন রীতিমত সংযত বিধায়ক। টিকিট না পাওয়ার খবর শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “দলের অনুগত সৈনিক হিসাবে দলনেত্রীর সিদ্ধান্তই মাথা পেতে নিলাম। দল যেমন দায়িত্ব দেবে, তা পালন করব। তবে আমার অপরাধটা জানলে নিজেকে শোধরাতে সুবিধা হত।’’ এ বার পুড়শুড়ায় দলের প্রার্থী এস নরুজাম্মান। ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বিধায়ক। বস্তুত, দীর্ঘদিন ধরেই দলের অন্দরে খবর ছিল এলাকায় গোষ্ঠীকোন্দল যে স্তরে পৌঁছেছে তাতে এ বার পুড়শুড়া থেকে জেতা কঠিন। বিশেষত, পুড়শুড়ার যে অংশটুকু খানাকুল বিধানসভা থেকে যোগ হয়েছে সেখানে দলেরই একটা অংশ তাঁকে হারিয়ে দিতে পারে এমন আশঙ্কাও ছিল। তার উপর ভাই মেহেবুব রহমান জেলার সভাধিপতি। সেই সূত্রে জেলা পরিষদের নানা কাজে বিধায়কের নাক গলানো থেকে শুরু ঠিকাদারির বরাত পাওয়া না পাওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ কালীঘাট পর্যন্ত পৌঁছেছিল। জেলা পরিষদে গোষ্ঠীকোন্দল মেটা দূরে থাক তা বাগে আনতেই হিমশিম অবস্থা দলের। টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সবই বিধায়কের বিরুদ্ধে গিয়েছে।
শুক্রবার প্রার্থীপদ ঘোষণা হওয়ার পর মুষড়ে পড়েন বিধায়কের সমর্থকেরা। বিক্ষুব্ধ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদেরও অনেকের বক্তব্য, “গোষ্ঠীবিবাদ জিইয়ে রাখা, কিংবা তৈরি করা নিয়ে বিধায়কের বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ ছিল ঠিকই। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা হিসাবে তাঁকে হাতের কাছে পাওয়া যেত। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। হেরেওছেন। তবু মাটি ছাড়েননি। গত বিধানসভায় জিতেছেন। সেই জেতা প্রার্থীকে সরিয়ে দিয়ে দল ভাল করেনি।” দলেরই আর এক নেতার কথায়, ‘‘সিপিএম এবং কংগ্রেস জোট হলে তো কথাই নেই। তা না হলেও সিপিএম পুড়শুড়ায় ভাল প্রার্থী দিলে এই আসন হাতে রাখা যাবে কি না সেই সংশয় তৈরি হয়ে গেল।” পারভেজের সমসাময়িক পুড়শুড়ার একদা দাপুটে তৃণমূল নেতা বর্তমানে কংগ্রেস যোগ দেওয়া অষ্ট বেরার প্রতিক্রিয়া, “সহকর্মীদের সম্মান করতে জানেন না। ক্ষুব্ধ ছিলেন অনেকেই। এ বার পারভেজ দাঁড়ালে পুড়শুড়া আসন তৃণমূলের ধরে রাখা কঠিন হত। তবে বাইরে থেকে প্রার্থী দেওয়ায় তা আরও নিশ্চিত হল।”
নতুন প্রার্থী রাজনীতিতে পোড় খাওয়া হলেও তাজ়ঁর বিরুদ্ধেও এলাকায় না যাওয়া নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার দলীয় কর্মী-সমর্থকদেরই একাংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল। পুড়শুড়ায় তাঁর আগমন দলকে কী ফল দেয় এখন সেটাই দেখার।