ছবি: দীপঙ্কর দে।
এক পক্ষ বলছে, মাত্র ছ’বছরে তারা রাস্তাঘাটের চেহারা বদলে দিয়েছে। রাস্তার কলে জলের সংযোগ দিয়েছে। দমকল কেন্দ্র তৈরি করেছে। পুরভবন নির্মাণের জন্য জমি নির্দিষ্ট করেছে। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।
অন্য পক্ষ বলছে, এখনও বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া যায়নি। হাসপাতাল গড়ে ওঠেনি। নেই কোনও কমিউনিটি হলও। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রাখেনি শাসকদল।
পুরভোটের প্রচার-পর্বে ডানকুনিতে আগাগোড়া তৃণমূলের মুখে শোনা গিয়েছে উন্নয়নের ফিরিস্তি। বিরোধীরা পাল্টা দাবি করেছে, উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি মতো হয়নি। শনিবার, শেষ দিনের প্রচারেও সেই তরজা বহাল রইল। কিন্তু কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় প্রচারে বিরোধীদের টেক্কা দিয়ে গেল শাসক দলই।
পঞ্চায়েত থেকে ডানকুনির পুরসভায় উন্নীত হওয়ার বয়স মাত্র ছ’বছর। শিল্প-নগরীর তকমা পেয়ে যাওয়া এ শহরে নাগরিক পরিষেবার চাহিদা প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু পুরসভার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলাই এখন সেখানে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই পরিকাঠামোর ক্ষতে প্রলেপ দিতেই ডানকুনিতে স্বপ্ন ফেরি করেছে শাসকদল।
২০০৯ সালের পুরভোটে ২১ ওয়ার্ডের ডানকুনিতে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে। স্বাভাবিক ভাবেই বাসিন্দাদের মনে উন্নত পরিষেবার আশা জাগে। এখন পুর-নির্বাচনের দোরগোড়ায় তাই পাওয়া-না পাওয়ার অঙ্ক কষছেন বাসিন্দারা। শাসকদলের এক নেতার দাবি, এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল উড়ালপুল। বাম জমানায় দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর টালবাহানা হয়েছে উড়ালপুল নির্মাণে। তাঁরা ক্ষমতায় আসার পর উড়ালপুল হয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়ে গিয়েছে দমকলকেন্দ্র। নির্বাচনী-বিধির জন্য তা চালু করা যায়নি। গোবরার কাছে আকডাঙ্গায় নতুন সেতু তৈরি হয়েছে। ডানকুনি হাউসিংয়ের সামনে দিল্লি রোড এবং দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কাছে পুরভবন তৈরির জন্য জমিও মিলেছে।
এলাকার তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উন্নয়ন করায় প্রচারের শেষ দিনেও আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। বস্তি উন্নয়নের টাকায় আমরা অনেক কাজ করেছি। ফের ক্ষমতায় এলে আমরা বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগের কাজও শেষ করব।’’
বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি কিন্তু প্রচারে সুর চড়ায় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দিকেই আঙুল তুলে। সিপিএমের এক স্থানীয় নেতার অভিযোগ, ‘‘খালি উন্নয়নের ফিরিস্তি দিলেই চলবে? পুর এলাকায় কোনও হাসপাতাল নেই। কোনও কমিউনিটি হল নেই। পুরসভার নিজস্ব বৈদ্যুতিক চুল্লিও নেই। কাজে অনেক খামতি রয়েছে।’’
শাসক-বিরোধী একই রকম তরজায় সরগরম হয়েছে উত্তরপাড়াও। হুগলির শহরাঞ্চলে এখন মাথা গোঁজার ঠিকানার দৌড়ে উত্তরপাড়া প্রথম। কলকাতার কাছের এই শহরে তাই গত দু’দশক জুড়ে জমির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বামেরা যে সময়ে এখানে পুরসভার ক্ষমতায় ছিল এলাকার অধিকাংশ পুকুরই সেই সময় বুজে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর উত্তরপাড়ায় শুরু হয়েছে পুরনো বাড়ি ভাঙা। ফলে, এলাকার জনসংখ্যা এখন বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে সমতা রেখে পরিষেবার পরিকাঠামো বাড়িয়ে তোলা যায়নি।
ভোটের ময়দানে সেই পরিষেবা নিয়েই কোমর বেঁধেছে বিরোধীরা। উত্তরপাড়ার রেল লাইনের এক দিকে মাখলা অঞ্চলে পানীয় জলের দাবি দীর্ঘদিনের। শহরের নিকাশি ব্যবস্থা বা রাস্তার আলো পর্যাপ্ত নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবাসন বাড়ায় শহরে পাল্লা দিয়ে কমেছে সবুজ। কমছে খেলার মাঠ। ভোটের আবহে শাসকদলের বিরুদ্ধে এইসব বিষয়গুলিকেই তুলে ধরছেন বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার শেষ প্রহরের প্রচারেও বিরোধী সিপিএম, বিজেপি বা কংগ্রেস প্রার্থীরা সেই সব অভিযোগকে সামনে এনেছেন।
শাসকদল অবশ্য বেশির ভাগ অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের প্রচারে শোনা গিয়েছে প্রতিশ্রুতির বন্যা। তারা বলছে, ক্ষমতায় এলে মাখলা অঞ্চলে প্রেক্ষাগৃগ নির্মাণ করা হবে। কো-অপারেটিভ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সুইমিং পুল, হাসপাতাল লাগোয়া মাঠে স্টেডিয়াম, পুরসভার নতুন ভবন গড়া হবে। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি পালনে আমরা দায়বদ্ধ। সেটাই প্রচারে তুলে ধরা হয়েছে।’’
পুরবাসী কাদের পক্ষে, সেটাই এখন দেখার।