লক্ষ্মীরতনের সভায় লোক হচ্ছে না

হাওড়ায় প্রকট তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

তিনি সক্রিয় রাজনীতি করছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে। নিজের কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হয়েছেন তিন-তিন বার। তাঁর অনুগামীরা মনে করেন এখনও ‘দাদা’কে হারানোর ক্ষমতা নেই বিরোধীদের।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫১
Share:

তিনি সক্রিয় রাজনীতি করছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে। নিজের কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হয়েছেন তিন-তিন বার। তাঁর অনুগামীরা মনে করেন এখনও ‘দাদা’কে হারানোর ক্ষমতা নেই বিরোধীদের। তা সত্ত্বেও তাঁকে এ বার লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরিয়ে দিয়েছে দল। অথচ প্রার্থী-তালিকা ঘোষণার আধ ঘণ্টা আগেও তাঁকে নাকি সর্বোচ্চ স্তর থেকে জানানো হয়েছিল, দল তাঁকে প্রার্থী করছে। তবে অন্য কেন্দ্রে। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পরে তিনি জানতে পারলেন, এ বার তাঁকে মাঠে নামতেই দেয়নি দল।

Advertisement

যে বর্ষীয়ান নেতার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে, তিনি হলেন উত্তর হাওড়া থেকে ২০১১ সালে নির্বাচিত হওয়া তৃণমূলের বিধায়ক অশোক ঘোষ। কিন্তু এমন এক প্রবীণ নেতাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাই করতে দেওয়া হল না! ফলে উত্তর হাওড়ায় তৃণমূলের অন্দরে সারা বছর চলা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকট হল। কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যে যে বিদ্রোহের চোরা স্রোত বইছে, তা একটু কান পাতলেই বোঝা যায়। আর এই চোরা স্রোতই দলের তারকা প্রার্থী লক্ষ্মীরতন শুক্লর জেতার পথে প্রধান কাঁটা হয়ে উঠবে কি না, সেটাই এখন দলে কার্যত মুখ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় তৃণমূলের এক যুবনেতার কথায়, ‘‘এই কাঁটার অস্তিত্ব সহজে বোঝা যায় না। আপাতদৃষ্টিতে দলের সকলেই তো মিটিং-মিছিল, রোড শোয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থীর সঙ্গে ঘুরছেন। দেখলে মনে হবে, সব ঠিক আছে। কিন্তু আমরা জানি, ঠিক নেই।’’

ঠিক যে নেই, তা বোঝা গেল সালকিয়ায় অশোকবাবু বাড়িতে পৌঁছেই। আগের মতো দোতলার ঘরে অনুগতদের নিয়ে মজলিস আর নেই। তবে আহ্বানে পুরনো আন্তরিকতা। শুরুতেই বললেন, দলের স্বার্থে তিনি প্রার্থীকে জেতানোর জন্য যা করার, করছেন। ডাক পেলেই তিনি প্রচারে বেরোচ্ছেন। হাতে একটা ছাপানো কাগজ দিয়ে জানালেন, এ বার তিনি টিকিট পাওয়া নিয়ে এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন। কী কী উন্নয়নমূলক কাজ উত্তর হাওড়ায় হয়েছে, তা প্রচারের জন্য পোস্টার-ফেস্টুনও তৈরি করা হয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

কিন্তু দল টিকিট দিল না কেন?

এ বার হতাশা ঝরে পড়লো প্রবীণ ওই নেতার গলায়। বললেন, ‘‘সেটাই তো কথা। দোষী জানতে পারল না, দোষ কী তার। অথচ সাজা হয়ে গেল।’’ সাজা পেলেও দলের হয়ে কাজ যে বন্ধ করেননি, তা প্রমাণ দিতে প্রায় প্রতিদিন দলের নির্বাচিত প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে বেরোচ্ছেন অশোকবাবু। মিছিল, সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন। পকেটের টাকা খরচ করে কর্মীদের চপ-মুড়ি খাওয়াচ্ছেন। তাঁর আক্ষেপ, এতকিছু করেও দলের কর্মীদের ভোটের ময়দানে নামাতে হিমসিম খাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন একটা ছোট সভা করে লোক ভরাতে পারা যাচ্ছে না। পিঠ চাপড়ে কর্মীদের বার করতে হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement