প্রতীকী ছবি।
এ যেন নাকের বদলে নরুণ!
হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের বড়গাছিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ক্লাস্টার গড়ার জন্য পাঁচ কোটি টাকা অনুদান বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও রাজ্য সরকার জমি দিতে পারেনি কারখানা-মালিকদের। প্রকল্পটিও হয়নি। এখন রাজ্য সরকার বলছে, এক কোটি টাকা দিয়ে প্রকল্পটি তারা গড়বে! কিন্তু তা কবে হবে, জমি কোথায় মিলবে, প্রশ্ন উঠছে।
কারখানা-মালিকেরা পাঁচ কোটির পরিবর্তে এক কোটির কথা শুনে চমকেছেন। অবশ্য তাঁরা বলছেন, ওই টাকাতেই তাঁরা কাজ চালাবেন। পরে নিজেরা জমি কিনে কেন্দ্রের সহায়তা পাওযার চেষ্টা করবেন।
বড়গাছিয়ায় প্রায় দেড় হাজার ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা আছে। অন্তত ১৫ হাজার পরিবার এই শিল্পে যুক্ত। ২০০০ সালের গোড়ায় কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে এখানে ইঞ্জিয়ারিং শিল্পের ক্লাস্টার গড়তে উদ্যোগী হয় রাজ্যের ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর। ক্লাস্টার গড়ার প্রাথমিক শর্ত মেনে তৈরি হয় কারখানা-মালিকদের সংগঠন— ‘বড়গাছিয়া ক্লাস্টার অব মেটাল প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স’। সংগঠনটিকে স্বীকৃতি দিয়ে বাছাই করা সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য নানা রাজ্যে পাঠায় সরকার। ক্লাস্টার গড়ার জন্য প্রয়োজন হয় ‘কমন ফেসিলিটি সেন্টার’ বা ‘সিএফসি’ গঠন। যেখানে থাকবে যন্ত্রপাতি এবং গবেষণাগার। যাতে কারখানা-মালিকেরা ‘সিএফসি’ ব্যবহার করে উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করতে পারেন। এই ‘সিএফসি’ গড়তেই পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার কথা কেন্দ্রের।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই খাতে টাকা পেতে হলে জমির ব্যবস্থা করার কথা মালিকদেরই। সেই জমি খুঁজতে গিয়ে কারখনা-মালিকদের নজরে পড়ে রাজ্য সরকারের বন্ধ পড়ে থাকা তালা কারখানার জমি। তারই আড়াই বিঘা জমিতে ‘সিএফসি’ গড়তে চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর জমিটি দিতে রাজি হয়। কেন্দ্র যখন জমির মালিকানার তথ্য চায়, কারখানা-মালিকেরা তখন জমিটি তাঁদের সংগঠনের অনুকূলে মিউটেশন করিয়ে দেওয়ার জন্য ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের কাছে আবেদন করেন। ওই দফতর ২০০৭ সালের মাঝামাঝি জমিটি কারখানা-মালিকদের জন্য মিউটেশন করাতে আর্জি জানায় ভূমি দফতরে। কিন্তু ২০১২ সালের জুনে ভূমি দফতর সেই আবেদন বাতিল করে দেয়।
কেন?
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দাবি, ১৯৫৫ সালে তালা কারখানাটি তৈরির সময় যে ভাবে জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, সেই পদ্ধতি ঠিক ছিল না। ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সময়মতো জোগান দেওয়া হয়নি বলে আবেদন বাতিল করতে সময় লাগে।
এর পরেই আতান্তরে পড়েন কারখানা-মালিকেরা। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ চেয়ে ২০১২ সালেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করেন তাঁরা। তার পরেও একাধিকবার তাঁরা রাজ্য প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন। মাসকয়েক আগে ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের কর্তারা ওই এলাকায় এসে জায়গা পরিদর্শনও করে গিয়েছেন। তার পরেই ওই দফতর জানায়, এখানে রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই ১ কোটি টাকা খরচ করে ‘সিএফসি’ গড়া হবে। তা ব্যবহার করবেন কারখানা-মালিকেরা।
কী বলছেন কারখানা-মালিকেরা?
কেন্দ্রের অনুদান পাওয়ার সম্ভাবনা আপাতত না-থাকায় তাঁরা ক্ষোভ গোপন করেননি। মালিক সংগঠনের পক্ষে তুষার কর এবং স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই জমি যে মিলবে না, তা আগে জানলে আমরা অন্য জমি কিনে নিতাম। এতদিনে ক্লাস্টার হয়ে যেত। এখনও জমিটা পেলে ফের কেন্দ্রীয় অনুদান পেতে চেষ্টা করতাম।’’
আপাতত রাজ্য সরকার কবে ‘সিএফসি’ বানায়, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন তাঁরা।