প্রতীকী চিত্র
কর্মিসংখ্যা কমেছে। কমেছে উৎপাদনও। প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাজ্যের গর্বের প্রতিষ্ঠান মাদার ডেয়ারির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত কর্মীদের বড় অংশ।ওই সংস্থা সূত্রের খবর, নিয়োগ না হওয়ায় কর্মিসংখ্যা কমতে কমতে এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, এখন আট ঘণ্টা করে তিনটি শিফ্টে কাজ চালানো কঠিন হচ্ছে। এই মুহূর্তে স্থায়ী কর্মী রয়েছেন ১৭৪ জন। অস্থায়ী ৩৬১ জন।এত কম লোকে তিনটি শিফ্টে কাজ চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন কর্মীদের বড় অংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এর জেরে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে, মাদার ডেয়ারির পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ক্রমশ কঠিন হচ্ছে।সূত্রের খবর, মাদার ডেয়ারিতে এখন দৈনিক দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ১ লক্ষ ৩০ হাজার লিটার। ছ’মাস আগেও দিনে ১ লক্ষ ৮০ হাজার লিটার থেকে ২ লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদন হত। উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহেও টান পড়েছে। যতগুলি রুটে সরবরাহ করা হত, তার সংখ্যাও কমেছে। কয়েকদিন আগে পাঁচটি রুট সরবরাহ কমানো হয়েছে বলে দাবি মাদার ডেয়ারির এক সূত্রের। সেই সূত্রে এ-ও দাবি করা হয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থাতে নানা ত্রুটি রয়েছে। ক্রেতারা অনেক সময় দুধ চেয়েও পান না।
সংস্থার পুরনো এক কর্মী বলেন, ‘‘ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের আওতায় যখন মাদার ডেয়ারিতে উৎপাদন শুরু হয়, সেই সময়ের থেকে এখন প্রতিযোগিতা বহু গুণ বেড়েছে। বাজারে যখন উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন, তখন উল্টো পথে হেঁটে তা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাঁচামালের জোগানে টান পড়েছে। কর্মিসংখ্যাও কমছে। এই সব কারণে অন্য দুধ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি মাদার ডেয়ারির বাজার দখল করে নিচ্ছে। যদিও বাজারে এখনও মাদার ডেয়ারির দুধের চাহিদা খুব ভাল।’’মাদার ডেয়ারির চিফ জেনারেল ম্যানেজার সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘উৎপাদন সে ভাবে কমেছে, এমন নয়। চাহিদা ও জোগানের উপরেই পুরো ব্যবস্থাটা নির্ভর করে। গুঁড়ো দুধ সংগ্রহ এবং গোয়ালাদের থেকে দুধ নেওয়ার সময় সমস্যা থাকে। সংস্থায় কর্মী সঙ্কোচন হয়নি। যাঁরা অবসর নিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রটা আলাদা। তবে উচ্চপদে নিয়োগের একটি বিষয় প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।’’
মাদার ডেয়ারি এমপ্লয়িজ় ইউনিয়নের সম্পাদক প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘আমরা সংগঠনের পক্ষে বারবার কর্তৃপক্ষকে নানা বিষয়ে অবহিত করেছি। অনেক কিছু করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও কিছুই করা হয়নি। সংস্থায় স্থায়ী পদে শেষবারের মতো নিয়োগ হয়েছে সেই নয়ের দশকে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘ডেয়ারির অবস্থা এখন এমন যে, রাতের শিফটে কাজ চালানো মুশকিল। শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত কারণে কয়েকজনকে থাকতে হয়। রাতে উৎপাদন কিছুই হয় না।’’ প্রদীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘দুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (গুঁড়ো দুধ) সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভাল না-হলে মানুষের কাছে দুধ কী করে পৌঁছাবে?’’সংস্থার কর্মী বা কর্মী সংগঠনের তরফে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা নিয়ে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কিছু সমস্যা সব প্রতিষ্ঠানেই থাকে। আমাদেরও রয়েছে। তবে সাময়িক। সমস্যা মিটে যাবে।’’